English

28 C
Dhaka
বুধবার, অক্টোবর ২৩, ২০২৪
- Advertisement -

চিনিকলগুলো চালু রাখুন: ঋণের বোঝা ৯ হাজার কোটি টাকা

- Advertisements -
দেশের চিনিকলগুলোর দুর্গতি অনেক আগে থেকেই। কোনোভাবেই চিনিকলগুলো লাভের মুখ দেখতে পারছে না। কমাতে পারছে না উৎপাদন খরচ। দেশে বেসরকারি খাতে অপরিশোধিত চিনি থেকে চিনি উৎপাদন ব্যয় কম হলেও রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানায় প্রতি কেজি চিনি উৎপাদনে খরচ হয় অনেক বেশি।
প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ায় উৎপাদন খরচ বেশি পড়ছে। বর্তমানে সুদসহ প্রতি কেজি চিনিতে উৎপাদন ব্যয় সবচেয়ে বেশি রাজশাহী চিনিকলে ৫০৪ টাকা, সর্বনিম্ন নর্থবেঙ্গল চিনিকলে ২১৮ টাকা। অন্যান্য চিনিকলের মধ্যে জয়পুরহাট চিনিকলে উৎপাদন ব্যয় ৪৫১ টাকা, ফরিদপুর চিনিকলে ৪০৭ টাকা, মোবারকগঞ্জ চিনিকলে ৩৮৪ টাকা, নাটোর চিনিকলে ৩৫১ টাকা।
গড়ে প্রতি কেজির উৎপাদন খরচ ৩১২ টাকার বেশি। অথচ বাজারে এক কেজি চিনি বিক্রি হয় ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়।
প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে পরবর্তী তিন বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচটি ব্যাংক থেকে পাঁচ হাজার ২২০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন। এই ঋণের সুদ দাঁড়িয়েছে চার হাজার ২০০ কোটি টাকা, যা সুদে-আসলে পরিশোধ করতে হবে ৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এর বাইরে বিভিন্ন সময়ে চিনিকল সংস্কারে ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে তিন বছরে নেওয়া হয়েছে প্রায় এক হাজার ৬০০ কোটি টাকার ঋণ, যা পরিশোধে তাগিদও রয়েছে।
দেশে চালু থাকা ১৫টি চিনিকলের মধ্যে তিনটি ব্রিটিশ আমলে, ৯টি পাকিস্তান আমলে, তিনটি বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রতিষ্ঠা করা হয়। এত পুরনো হওয়ায় এসব চিনিকলের রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বেশি, উৎপাদনও কম। কাছের দেশ ভারত, পাকিস্তান ও থাইল্যান্ডে চিনিকলে রিকভারি ১০-১১ শতাংশ। সেখানে বাংলাদেশে রিকভারি ৬ শতাংশের কম। প্রতিবছরই রিকভারির হার কমছে।
এতে কমছে উৎপাদন। ২০১৬ অর্থবছরে যেখানে ৫৯ হাজার টন চিনি উৎপাদিত হয়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে উৎপাদন গিয়ে ঠেকেছে ২১ হাজার ৩১৪ টনে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ২৬০ কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে হিসাব করেছে করপোরেশন। ২০২১-২২ অর্থবছরে আয় হয়েছে ৪১২ কোটি টাকা। বিপরীতে ব্যয় এক হাজার ১৯২ কোটি টাকা। এতে আয় ও ব্যয়ের বিশাল ব্যবধান সুস্পষ্ট।
চিনিকলগুলো দেখভালের দায়িত্ব বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প সংস্থার। লাভ-লোকসানের বাইরে সংস্থাটির একটি সামাজিক দায়িত্ব রয়েছে। চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে সংস্থাটির সহায়ক ভূমিকা পালন করার সুযোগ ছিল। বেসরকারি চিনিকলগুলো লাভজনক হলেও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে কেন লোকসান হচ্ছে? কর্তৃপক্ষের সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে না পারা, আখস্বল্পতা, বহু পুরনো যন্ত্রপাতির সাহায্যে উৎপাদন এবং আখ প্রক্রিয়াকরণে অদক্ষতাও রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলে লোকসানের কারণ বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
করপোরেশনের কর্মকর্তাদের আশা, বিদ্যমান চিনিকলের আধুনিকায়ন, বহুমুখীকরণ এবং নতুন চিনিকল স্থাপন করা হলে চিনিকলের লোকসান কমিয়ে লাভজনক খাতে যাওয়া যাবে। এ জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন জরুরি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, সরকারি চিনিকল বন্ধ হয়ে গেলে বেসরকারি আমদানিকারক কম্পানিগুলো ইচ্ছামতো দাম নির্ধারণ করতে পারবে। এ কারণে তারা সুকৌশলে চিনিকল বন্ধ করে দিতে চায়।

চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য হলেও সরকারি চিনিকলগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। চিনির বাজারে একচেটিয়া বাণিজ্য বন্ধ করতে সরকারি চিনিকলগুলো চালু রাখতে হবে।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন