সমুদ্রপথে আমাদের আমদানি-রপ্তানির ৯৮ শতাংশ পণ্যই পরিবহন করা হয় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের মাধ্যমে। অপর দুটি সমুদ্রবন্দরের মধ্যে পায়রা এখনো পুরোপুরি চালু হয়নি। মোংলায় পণ্য পরিবহনের পরিমাণ খুবই কম। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম বন্দরের ওপরই আমদানি-রপ্তানিকারকেরা প্রধানত নির্ভর করে থাকেন। লয়েডস লিস্ট নামে লন্ডনভিত্তিক বিখ্যাত সাময়িকী ২০১৯ সালে সারা বিশ্বের ১০০টি শীর্ষ বন্দরের তালিকা তৈরি করে, যাতে বাংলাদেশের অবস্থান ৫৮তম। বরাবরের মতো এ বছরও চীনের সাংহাই প্রথম এবং সিঙ্গাপুর দ্বিতীয় অবস্থানে। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান ৫৮তম। ২০১৮ সালে ছিল ৬৪তম। এক বছরের ব্যবধানে কনটেইনার পরিবহনে চট্টগ্রাম বন্দরের ছয় ধাপ এগিয়ে থাকা অবশ্যই উল্লেখযোগ্য ঘটনা। ২০১৯ সালে বিশ্বের বন্দরগুলোর গড় প্রবৃদ্ধি ছিল আড়াই শতাংশ। চট্টগ্রাম বন্দরে প্রবৃদ্ধি প্রায় ৬ শতাংশ।
দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরের এ চিত্র দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়ারই ইঙ্গিত দেয়। তবে লয়েড লিস্ট এ তথ্য দেওয়ার পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দরের সম্প্রসারণের ওপর জোর দিয়েছে। বন্দরের যে সক্ষমতা আছে, তাতে আরও এক–দুবছর হয়তো চাহিদা মেটানো যাবে। কিন্তু যে হারে কনটেইনার পরিবহন বাড়ছে, তাতে বন্দর সম্প্রসারণ করতেই হবে। প্রথমত, চট্টগ্রাম বন্দরে আরও জেটি ও কনটেইনার ওঠানো-নামানোর জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি জোগান দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, পতেঙ্গা টার্মিনালের কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে। বে টার্মিনাল ও মাতারবাড়ী টার্মিনাল স্থাপনের কাজও দ্রুত এগিয়ে নিতে হবে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে যত পণ্য পরিবহন হয়, তার ২৭ শতাংশ কনটেইনারে আনা-নেওয়া হয়। বাকি ৭৩ শতাংশই আনা-নেওয়া হয় কনটেইনারবিহীন সাধারণ জাহাজে। সাধারণ জাহাজের (বাল্ক, ব্রেক বাল্ক ও ট্যাংকার) খোলে আমদানি হয় মূলত সিমেন্ট, ইস্পাত ও সিরামিক কারখানার কাঁচামাল এবং পাথর, কয়লা, ভোগ্যপণ্য ও জ্বালানি তেল। পরিমাণে এক-চতুর্থাংশ পণ্য পরিবহন হলেও কনটেইনারে বেশির ভাগ শিল্পের কাঁচামাল, বাণিজ্যিক পণ্য ও ভোগ্যপণ্য আমদানি হয়। অন্যদিকে সমুদ্রপথে রপ্তানির পুরোটাই যায় কনটেইনারে।
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশীয় পণ্যের আমদানি-রপ্তানির বাইরে সম্প্রতি ভারত দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পণ্য পরিবহনে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করছে। প্রাথমিকভাবে পণ্য পরিবহনের পরিমাণ কম হলেও ভবিষ্যতে তা বাড়বে। নেপাল ও ভুটানও সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনের জন্য বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী। সে ক্ষেত্রে চট্টগ্রামসহ তিনটি সমুদ্রবন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আর সেটি সম্ভব হবে আধুনিক যন্ত্রপাতিসহ অধিক জেটি ও অধিক টার্মিনাল স্থাপনের মধ্য দিয়ে। আশা করি, সরকার চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে দ্রুতই কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। এতে কেবল আমদানি-রপ্তানিকারকেরাই লাভবান হবে না, মজবুত হবে দেশের অর্থনীতিও।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন