চট্টগ্রামে কিছুদিন পরপরই নালায় পড়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে, বিশেষ করে বৃষ্টিতে রাস্তায় পানি জমে গেলে। গত সোমবার আগ্রাবাদ এলাকায় ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় নালায় পড়ে নিখোঁজ হন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী মেহেরীন মাহবুব সাদিয়া। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। গত ২৫ আগস্ট মুরাদপুর এলাকায় খালে পড়ে তলিয়ে যান নগরীর এক বাসিন্দা। তাঁর খোঁজ আর মেলেনি। চলতি বছরের ৩০ জুন নগরীর ষোলশহর চশমা হিল এলাকায় খালের পাশের সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় খালে পড়ে যায় একটি অটোরিকশা।
স্রোত থাকায় খালে তলিয়ে মারা যান চালক ও এক যাত্রী। ২০১৭ সালে এম এম আলী সড়কে রয়েল গার্ডেন কমিউনিটি সেন্টার সংলগ্ন বড় নালায় পড়ে তলিয়ে যান এক সাবেক সরকারি কর্মকর্তা। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যাচ্ছে, সাদিয়া যেখানে পড়ে গিয়েছিলেন, সেখানে রাস্তার পাশে নালা করা হয়েছে কয়েক মাস আগে। এই অংশটা একদম সরু। এখান দিয়ে হেঁটে যাওয়া বিপজ্জনক। রাস্তাও কাদায় ভরা।
এ ধরনের ঘটনা ঘটার পর সিডিএ ও সিটি করপোরেশন একে অন্যকে দায়ী করে। সাম্প্রতিক ঘটনাটি নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র বলেছেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দেওয়ানহাট থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত যে কাজ চলছে, তা সিডিএর আওতায়। এখানে সড়ক সংস্কার থেকে পরিষ্কার রাখা সব তাদের দায়িত্ব। অনেক গর্ত হয়েছে।
তাদের অবহেলা ও অসতর্কতার জন্য এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে সিডিএ বলছে, এটা সিটি করপোরেশনের খাল। খালটা অনেক আগে থেকেই ওপেন ছিল। সেটা সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব। তারা যদি খালের ওপর স্ল্যাব না দেয় তাদের কিছু করার নেই। সিডিএর কোনো দোষ নেই, দাবি করেছেন সিডিএর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক।
নাগরিক সেবার মান উন্নয়নে সিটি করপোরেশনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রাম মহানগরী নিয়ে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, নগরের প্রধান কিছু সড়ক ছাড়া পাড়া-মহল্লার রাস্তাগুলোর অবস্থা ভালো নয়। বর্ষায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। ড্রেনেজব্যবস্থাও ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। কিছু জায়গায় জোয়ার-ভাটায়ও পানি উঠে আসে, দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। খালগুলো দখল ও ভরাট হয়ে থাকায় বৃষ্টির পানি নামতে পারে না। ফলে নগরবাসীকে এ নিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়, যেখানে-সেখানে বর্জ্য জমে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। নগরের উন্নয়নে জোড়াতালি দেওয়ার মতো বিচ্ছিন্ন কিছু কাজ হলেও মাস্টারপ্ল্যানের মাধ্যমে নগরের উন্নয়ন হচ্ছে না।
চট্টগ্রামকে বলা হয় দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী। এই নগরীর নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। কোনো প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নকাজ যদি নাগরিক ভোগান্তি শুধু নয়, মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়, তার দায় কে নেবে। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু আমরা দেখতে চাই না।