বাংলাদেশে এমন অনেক দিন আছে, যে দিনগুলো আমাদের জন্য একেবারেই সুখকর নয়। বলা যেতে পারে, এই দিনগুলো একেকটি কালো দিন। তেমনই একটি দিন ২৬ সেপ্টেম্বর। ১৯৭৫ সালের এই দিনে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমদ ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) অধ্যাদেশ জারি করেন। এটি ১৯৭৫ সালের অধ্যাদেশ নম্বর ৫০ নামে অভিহিত ছিল। পরে ১৯৭৯ সালের ৯ জুলাই বাংলাদেশ সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর পর সংশোধিত আইনে এ আইনটি বাংলাদেশ সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
কোনো বিচারকাজ আদালতবহির্ভূত রাখার জন্য আইনসভা যে আইন পাস করে তাকেই ইনডেমনিটি আইন বলে। অধ্যাদেশের মূল কথা হলো, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আইনের পরিপন্থী যা কিছুই ঘটুক না কেন, খুনিদের বিরুদ্ধে কোনো আদালতে মামলা বা অভিযোগ দায়ের করা যাবে না। নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞের পর খুনিদের যাতে বিচার করা না যায় সে জন্য ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন আইন প্রণয়নের কোনো নজির নেই। মানবসভ্যতার ইতিহাসে মানবাধিকারের এমন চরম লঙ্ঘন কখনো কোথাও ঘটেনি। বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কজনক এই আইন। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিচারকাজ আদালতবহির্ভূত রাখার জন্য এই অধ্যাদেশ বা আইন জারি করা হয়।
পৃথিবীর সব রাষ্ট্রেরই লক্ষ্য সর্বোত্তমভাবে প্রত্যেক জনগণের ন্যায়বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করা। কোনো নাগরিকের আইনগত অধিকার লঙ্ঘিত হলে তিনি দেশের প্রচলিত আইনানুযায়ী প্রতিকার লাভের অধিকারী এবং এই অধিকার লঙ্ঘনের উপযুক্ত প্রতিকার পাওয়া তাঁর সাংবিধানিক অধিকার। বাংলাদেশের সংবিধানে বলা আছে, সব নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হবে।
সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৭ অনুযায়ী সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং প্রত্যেক নাগরিক আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী। বিচারব্যবস্থায় সব নাগরিকের সমান প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা এবং সবার জন্য ন্যায়বিচার পাওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের।
১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর সপ্তম জাতীয় সংসদে ইনডেমনিটি আইন বাতিল করা হয়। ২৬ সেপ্টেম্বরকে স্মরণ করে প্রতিটি প্রজন্মকে জানাতে হবে এমন একটি জাতির অংশ আমরা, যে জাতি তার পিতাকে হত্যা করে হত্যার বিচারের পথ আইন করে রুদ্ধ করে দিয়েছিল। দায়মুক্তি আইন বাতিল হয়েছে, কিন্তু এখনো আমাদের বিবেকের দায়মুক্তি হয়নি?