বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের দেড় বছরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের শিক্ষা খাত। শিক্ষার্থীরা এই সময়ে নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত হতে পারেনি। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত করা হয়েছে। গত বছরের উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি), জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা বাতিল করা হয়। স্কুল খোলা যায়নি বিধায় বার্ষিক পরীক্ষাসহ কোনো পরীক্ষাই নেওয়া হয়নি। জেএসসি ও এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। স্কুল-কলেজের সঙ্গে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ হয়ে যায়। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে গত বছর অটো প্রমোশন দেওয়া হয়েছে।
চলতি বছরের মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত শিশুদের শিক্ষাজীবনে কী কী পরিবর্তন এসেছে, তা জানতে গবেষণা করে পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি)। গবেষণায় যেসব তথ্য উঠে এসেছে, তাতে চিন্তিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। তিন হাজার ৭৪২ জন অভিভাবকের কাছ থেকে সংগ্রহ করা তথ্যের ভিত্তিতে গবেষণার ফল বলছে, গ্রাম এবং শহরের বস্তি এলাকায় চলতি বছরের মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে লার্নিং লস বা শিখন ঘাটতির ঝুঁকি বেড়েছে। শিখন ঘাটতির এই প্রবণতা মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশি। মার্চে তাদের মধ্যে এই ঝুঁকি ২৬ শতাংশ থাকলেও আগস্টে বেড়ে দাঁড়ায় ৩৪ শতাংশ। শিখন ঘাটতির এ সমস্যার পেছনে আর্থ-সামাজিক অসমতার একটি ভূমিকা রয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে গবেষণায়। বলা হয়েছে, দেশের শিক্ষায় যে বৈষম্য তা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে মহামারি। মহামারির কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যেও বিরূপ প্রভাব পড়েছে বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে। করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে শিক্ষার্থীদের ওপর যে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে, তাকে ছোট করে দেখার উপায় নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিখন ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব। এর জন্য হয়তো শিক্ষার সময় কিছুটা বাড়াতে হতে পারে। যে কনটেন্টগুলো দরকার, সেশন বাড়িয়ে পরিকল্পিতভাবে তা শিখিয়ে ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব বলে মনে করেন তাঁরা। করোনায় আর্থিক ঝুঁকি ও স্বাস্থ্যঝুঁকির মতো মানবসম্পদের সংকটও গুরুত্বপূর্ণ। পুনর্বাসন ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা শিখন ঘাটতি এবং ঝরে পড়ার ঝুঁকি মোকাবেলায় সহায়ক হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।