বছরের শুরুতে বিনা মূল্যে বই দেওয়া হয়। শিক্ষাপঞ্জি, উপবৃত্তি দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়িয়েছে। কমেছে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা। বেড়েছে পাসের হার।
কিন্তু শিক্ষার মান কতটা বেড়েছে?রাজশাহী ও খুলনার প্রান্তিক অঞ্চলে পাঁচ থেকে ১৬ বছর বয়সী এক হাজার ৫৩৩ জন শিশুর ওপর চালানো জরিপে দেখা গেছে, তাদের একটা অংশ বাংলা ও ইংরেজি বর্ণ পর্যন্ত পড়তে পারে না। সারা দেশে পরিচালিত সরকারি এক জরিপেও দেখা গেছে, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কিছু শিক্ষার্থী বর্ণমালা পর্যন্ত ভুলে গেছে।শিক্ষা খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাব, শিক্ষকদের মান ও প্রশিক্ষণে ঘাটতি এবং পাঠদানে অনীহার কারণে এমন পরিস্থিতি। জরিপের মাধ্যমে করোনা-পরবর্তী শিক্ষার্থীদের শিখনস্তরের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে।এটা তো মানতে হবে যে করোনা মহামারি শিশুদের শিক্ষার অপূরণীয় ক্ষতি করেছে। শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বন্ধ থাকায় বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর মধ্যে এ সময় ব্যাপক শিখন ঘাটতি তৈরি হয়। সারা দেশের, বিশেষ করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের বা শহরের বস্তি ও নিম্নবিত্ত এলাকার শিশুরা এ সময়ে অনেকটাই পিছিয়ে পড়ে।শিক্ষার প্রথম ভিত্তি হলো প্রাথমিক শিক্ষা, কিন্তু আমাদের দেশে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার।স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শিক্ষকদের সরকারি করেছিলেন। শিক্ষা বিস্তার ও শিক্ষকদের মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। বর্তমান সরকারের আমলে দেশের প্রাথমিক শিক্ষা খাতে তিনটি বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে, কিন্তু শিক্ষার মান সে অর্থে একেবারেই বাড়েনি।শিক্ষকের মান না বাড়লে যে শিক্ষার মান বাড়বে না, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষার মান নিয়ে কয়েক মাস আগে ইউনেসকোর প্রতিবেদনে বলা হয়, যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকের অভাবেই বাংলাদেশে শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত হচ্ছে না।এমনকি প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রেও দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ সবচেয়ে পিছিয়ে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।প্রাথমিক শিক্ষার মান এখন পর্যন্ত আশানুরূপ না হওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে মানসম্মত শিক্ষকের অভাব। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো।প্রাথমিক শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে হলে একেবারে গোড়ায় হাত দিতে হবে। যোগ্য ও মেধাবীদের প্রাথমিক শিক্ষায় নিয়োগ দিতে হবে। টেকসই উন্নয়নের প্রথম শর্ত মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।