জ্বালানি বিভাগ ও পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা বলছেন, কয়েক বছর ধরে দেশীয় কূপগুলোতে গ্যাসের উৎপাদন কমছে। চাহিদা সামাল দিতে অন্তর্বর্তী সরকার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি বাড়িয়েছে।
পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দেশে গ্যাসের চাহিদা প্রায় চার হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। গত রবিবার গ্যাস সরবরাহ করা হয় দুই হাজার ৬৯৮ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে এক হাজার ৮৪২ মিলিয়ন ঘনফুট এবং আমদানীকৃত এলএনজি থেকে ৮৫৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, সাভার, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীর শিল্প-কারখানাগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস না পাওয়ায় উৎপাদন প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। গ্যাসের চাপ কম থাকায় এসব এলাকার শিল্প-কারখানা কখনো চলছে, কখনো বন্ধ থাকছে। গ্যাসচালিত ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনের নিজস্ব ব্যবস্থা থাকলেও গ্যাসসংকটে শিল্প-কারখানাগুলো সেগুলোও চালাতে পারছে না। অনেকে বাধ্য হয়ে বিকল্প জ্বালানি এলপিজি ব্যবহার করছে। এতে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বড় ক্ষতির মুখে পড়ছেন শিল্পোদ্যোক্তারা।
আওয়ামী লীগ সরকার মাটি ও সমুদ্রের নিচের গ্যাস-তেল উত্তোলনের চেষ্টা না করে আমদানিনির্ভর জ্বালানি খাত তৈরি করেছে। এতে ব্যক্তি ও গোষ্ঠী বিশেষ লাভবান হলেও খেসারত দিতে হয়েছে সাধারণ নাগরিকদের। জ্বালানি উপদেষ্টা নতুন গ্যাস ও তেল ক্ষেত্র অনুসন্ধানে সরকার দ্রুত উদ্যোগ নেবে বলে জানিয়েছেন।
কাজটি যত দ্রুত শুরু হবে, ততই মঙ্গল বলে মনে করি। কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতা আমাদের ভালো নয়। কারণ ১৯৯৫ সালের জ্বালানি নীতিমালায় বছরে চারটি অনুসন্ধান কূপ খননের কথা বলা হলেও কোনো সরকারই সে লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি যেতে পারেনি। ফলে পুরনো কূপগুলোতে গ্যাসের মজুদ কমছে।
গত কয়েক বছরে একাধিক গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের ঘোষণা এলেও দেশে গ্যাসসংকট কমেনি, বরং আরো বেড়েছে। এমনকি বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি করেও সংকটের সমাধান আসেনি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতীতে জ্বালানি নিয়ে সরকারের নেওয়া ভুল নীতির কারণেই গ্যাসসংকটের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
অন্যদিকে এখনকার চ্যালেঞ্জিং সময়ে গ্যাসের দাম ও সরবরাহ সংকট উভয়ই উৎপাদনমুখী খাতে পণ্য উৎপাদনের ব্যয় বাড়াচ্ছে। দেশের অর্থনীতি ধরে রাখতে গ্যাস সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন ও দাম বর্তমানের চেয়ে কমানো দরকার। শিল্প খাত না বাঁচলে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি থেমে যাবে। তাই শিল্পের গ্যাস-বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানোর জোরালো উদ্যোগ নিতে হবে।