বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মৃত্যুর পর ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়ার ক্ষেত্রে নারী ইউএনওদের বিকল্প খুঁজতে বলেছে সংসদীয় কমিটি। গত রবিবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই সুপারিশ করা হয়েছে। সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধা মারা যাওয়ার পর তাঁকে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানায় সংশ্লিষ্ট জেলা বা উপজেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক বা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে সেখানে থাকেন। কফিনে সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী কর্মকর্তা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। অনেক স্থানে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দায়িত্বে নারী কর্মকর্তারা রয়েছেন।
২০২০ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান প্রদর্শনের নতুন আদেশে বলা হয়েছে, মহানগর ও জেলা সদরে জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা পর্যায়ে হলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মান প্রদর্শনের জন্য সরকারের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করবেন। রাষ্ট্রীয় বা জনগুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত থাকলে জেলা প্রশাসকের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পক্ষে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সরকারের প্রতিনিধিত্ব করবেন। সরকারের অনুমোদিত প্রতিনিধি কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। অনুমোদিতসংখ্যক পুলিশ বাহিনীর সশস্ত্র সদস্যরা সশস্ত্র সালাম প্রদান করবেন এবং বিউগলে করুণ সুর বাজাতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাংবাদিকদের বলেছেন, যেহেতু মহিলারা জানাজায় থাকতে পারেন না, তাই মহিলা ইউএনও গার্ড অব অনার দিতে গেলে স্থানীয় পর্যায়ে অনেকে প্রশ্ন তোলেন। তাই মহিলার বিকল্প একজন পুরুষকে দিয়ে গার্ড অব অনার দেওয়ার প্রস্তাব এসেছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির মন্ত্রণালয়কে এটা পরীক্ষা করে দেখতে বলেছেন। তাঁদের বিবেচনা করার দরকার ছিল, জানাজা আর গার্ড অব অনার এক বিষয় নয়। এ দেশে একটি গোষ্ঠী নারী নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলে। গার্ড অব অনার নিয়ে ভেবে দেখতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা কি তাঁদের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে ফেললেন।
সমাজের নানা মহল থেকে এই প্রস্তাবের সমালোচনা করা হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে যেখানে রাষ্ট্র একজন মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মান জানাবে, সেখানে কে নারী, কে পুরুষ—এই প্রশ্নটাই আসবে কেন? এ ধরনের সুপারিশ স্বাধীন বাংলাদেশে একেবারেই অগ্রহণযোগ্য, সংবিধান পরিপন্থী, নারীর মানবাধিকার পরিপন্থী ও নারীর ক্ষমতায়ন পরিপন্থী বলেও মনে করেন নারী অধিকার কর্মী ও সংগঠনগুলো।