আস্থার সংকট দেশের অনেক বিনিয়োগকারীকেই পুঁজিবাজার থেকে দূরে রেখেছে। অনেকেই এখন বাজার থেকে মূলধন তুলে নেওয়ার পথ খুঁজছে। নিজেদের সব সঞ্চয় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া বিনিয়োগকারীর সংখ্যাও একেবারে কম নয়। দেশের পুঁজিবাজারকে ডুবন্ত অবস্থা থেকে টেনে তোলার চেষ্টাও কম হয়নি। সরকার নানা সুযোগ দিয়ে বাজারকে একটি স্থিতিশীল অবস্থায় আনার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আস্থার সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। তার কারণ বাজারে কারসাজি সৃষ্টিকারী প্রভাবশালীরা সব সময় সক্রিয়। এই কারসাজি সৃষ্টিকারীদের হাতেই অনেকাংশে নির্ভর করে বাজারের ওঠানামা।
অনেক সময় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের নিষ্ক্রিয়তা এবং আস্থাহীনতায় বাজার পড়ে যায়। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা শেয়ার ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতাও বাজারকে প্রভাবিত করে। ফলে দেশের পুঁজিবাজার দীর্ঘ সময় ধরে অনেকটাই নিষ্ফলা ছিল। সেই অবস্থা সম্প্রতি কাটতে শুরু করেছে। সরকারের বিভিন্ন নীতি এবং বিএসইসির বিভিন্ন কঠোর পদক্ষেপের কারণে পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীর আস্থা ফিরছে। গত মঙ্গলবার ডিএসইর লেনদেন আড়াই হাজার কোটি টাকার ঘর অতিক্রম করেছে, যা গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এদিন ডিএসইতে দুই হাজার ৫৪৬ কোটি ৮২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়।
প্রশ্ন উঠতে পারে, আমরা কি আমাদের পুঁজিবাজারকে সেভাবে ব্যবহার করতে পারছি? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে প্রথমেই বাজারের চরিত্র নিয়ে কথা বলা যেতে পারে। বাংলাদেশের পুঁজিবাজার এখন পর্যন্ত অতটা বিনিয়োগনির্ভর হতে পারেনি, যতটা তা ট্রেডিংনির্ভর। তার ওপর এই বাজারে রয়েছে জুয়াড়িদের প্রভাব। পুঁজিবাজার যখন চাঙ্গা থাকে তখন বড় বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি ছোটখাটো অনেক বিনিয়োগকারীকে বিনিয়োগে উৎসাহিত হতে দেখা যায়।
বাজারে বিনিয়োগ বলতে যেটা আসে, সেটা মূলত ট্রেডিং। সেখানে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের একটি অংশকে প্রতিদিনের ব্যবসা করতে আসতে দেখা যায়। এই সুযোগ নিয়ে জুয়াড়িরা বাজারকে ব্যবহার করে মূলধন তুলে নিয়ে যায়, অন্যদিকে পথে বসে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা।
প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে তাদের সর্বস্বান্ত করা হয়। আর এখানেই দেখা দেয় আস্থার সংকট। ফলে দীর্ঘ মেয়াদে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ আসে না। অথচ অত্যন্ত ইতিবাচকভাবে আমাদের পুঁজিবাজারটি ব্যবহারের সুযোগ ছিল। সে সুযোগ এখনো আছে। রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষ কঠোর হলে জুয়াড়িরা সুযোগ পাবে না। অন্যদিকে বিনিয়োগকারীদেরও সাবধান হতে হবে। না বুঝে বিনিয়োগ করা যাবে না।