বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৪০টি যানবাহন দুর্ঘটনাকবলিত হয়েছে। নিহত হয়েছেন ১৬ জন। আহত হয়েছেন আরো অনেকে। দেশের পশ্চিমাঞ্চলের ৯টি জেলায় ঘটে যাওয়া এসব দুর্ঘটনার মূল কারণ ছিল অতিরিক্ত কুয়াশা।
জেলাগুলো হচ্ছে—গাইবান্ধা, টাঙ্গাইল, যশোর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, মাগুরা, সিরাজগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও বাগেরহাট। এ সময় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাটের মধ্যে ফেরি চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। শীতের রাতে ঘাটে ও ফেরিতে থাকা যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
শীতের সময় কুয়াশা হওয়াটা স্বাভাবিক ঘটনা। বাতাসে থাকা জলীয় কণার সঙ্গে ধুলাবালি মিশে তৈরি হয় এমন কুয়াশা। আমাদের দেশে পদ্মা ও যমুনা অববাহিকায় কুয়াশার পরিমাণ সব সময়ই বেশি থাকে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে অত্যধিক পরিবেশদূষণের কারণে বাতাসে ধোঁয়া ও ধুলাবালির পরিমাণ এত বেশি থাকে যে কুয়াশা অনেক ঘন হয়ে যায়। দৃষ্টিসীমা কয়েক ফুটের মধ্যে চলে আসে। এ সময়ে রাস্তায় থাকা কোনো গাড়ি যখন কয়েক ফুট দূরে আরেকটি গাড়িকে দেখতে পায়, তখন গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। দুর্ঘটনা ঘটে যায়। প্রকাশিত খবর থেকে দেখা যায়, শুধু বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষই নয়, রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের সঙ্গেও সংঘর্ষ হয়েছে। সেতুর রেলিংয়ের সঙ্গে ধাক্কা লেগেছে। অন্য গাড়িকে পেছন থেকে ধাক্কা দেওয়া হয়েছে।
ঘন কুয়াশায় হেডলাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চালাতে হয়। গতিও অত্যন্ত সীমিত রাখতে হয়, যাতে দু-এক ফুটের মধ্যে গাড়ি থামানো যায়। কিন্তু বেশির ভাগ চালকই এসব নিয়ম মানেন না। আবার রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে নিশ্চয়ই কোনো বাতি থাকে না। গাছ, সেতুর রেলিং, পিলার কিংবা আরো অনেক কিছু থাকে, যেগুলোতে বাতি থাকে না। তাই গতি সীমিত না হলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকবেই। আবার কোন গাড়ি হেডলাইট না জ্বালিয়ে চলছে কিংবা কোন গাড়ি অতিরিক্ত গতিতে চলছে, সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করার জন্য রাস্তায় ট্রাফিক বা হাইওয়ে পুলিশকেও এত ঘন কুয়াশার মধ্যে তেমন সক্রিয় দেখা যায় না। অবশ্য ঘন কুয়াশায় তাঁদেরও দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই অতিরিক্ত ঘন কুয়াশায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরি। মানুষের চলাচল যেমন জরুরি, জীবনের নিরাপত্তা বিধানও একইভাবে জরুরি। তা না হলে এমন দুঃখজনক ঘটনা ঘটতেই থাকবে।
আমাদের সড়ক-মহাসড়কে এমনিতেই দুর্ঘটনার সংখ্যা অনেক বেশি। তার ওপর যদি ঘন কুয়াশায় নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চালাতে গিয়ে এক দিনে ৪০টি গাড়ি দুর্ঘটনাকবলিত হয়, তাহলে সেটি হবে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এই পরিস্থিতি কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় তা নিয়ে সড়ক সংশ্লিষ্টদের আরো ভাবতে হবে এবং দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।