যেখানে আমাদের দেশে জনপ্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা বরাবর জনগণের স্বার্থের বিপরীতে চলতে অভ্যস্ত, সেখানে রাজশাহীর প্রশাসন ও একজন সাংসদ জনগণের কল্যাণে সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেন। এটি আশার কথা।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চণ্ডীপুর ও বড় ছয়ঘটি এবং লালপুর উপজেলার বসন্তপুর, রাধাকৃষ্ণপুর ও মীর্জাপুর মাঠ একসঙ্গে লাগোয়া। অবৈধভাবে পুকুর খননের কারণে এ মাঠ থেকে প্রাকৃতিকভাবে পানি নিষ্কাশনের নালা বন্ধ হয়ে যায়। চলতি বছর অতিবর্ষণের কারণে বাঘা উপজেলার চণ্ডীপুর গ্রামের অংশবিশেষ ও বড় ছয়ঘটি গ্রাম; লালপুর উপজেলার বসন্তপুর, রাধাকৃষ্ণপুর ও মীর্জাপুর; অমরপুর, জোতগরিব, মণিহারপুর ও বেরিলাবাড়ি গ্রামের একাংশের বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ে। ২০১২ সালের আগপর্যন্ত এখানে বছরে তিনটি করে ফসল হতো। বর্ষার পানি লালপুরের আটটিকার কালভার্টের নিচের খাল দিয়ে পার হয়ে চলনবিলে চলে যেত।
অপরিকল্পিতভাবে পুকুর কাটায় এই প্রাকৃতিক নালাও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।সমস্যাটি দীর্ঘদিনের হলেও প্রতিকারের কোনো উদ্যোগ ছিল না। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর এই এলাকার জলাবদ্ধতা নিয়ে ‘অপরিকল্পিত পুকুর খনন, জলাবদ্ধতায় নষ্ট ফসলি জমি’ শিরোনামে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধি নড়েচড়ে বসেন। গত ২৭ জুলাই নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সাংসদ শহীদুল ইসলাম জলাবদ্ধ এলাকা পরিদর্শন করে খাল উদ্ধারের ঘোষণা দেন। বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশে এগিয়ে আসে স্থানীয় প্রশাসনও। তাদের সহায়তায় গত সোমবার বাঘা ও লালপুরের প্রায় তিন হাজার মানুষ কোদাল নিয়ে বিলে নামেন এবং অবৈধভাবে স্থাপিত পুকুরগুলো কেটে দিয়ে খাল উদ্ধার করেন।
পুকুরমালিকেরা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেও সফল হননি জনগণের প্রতিরোধের কারণে। সব স্থানেই কিছু মানুষ থাকেন, যাঁরা ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য সমষ্টির ক্ষতিসাধন করতে দ্বিধা করেন না। রাজশাহীর বাঘা ও নাটোরের লালপুর উপজেলায়ও একই ঘটনা ঘটেছে। গত আট–নয় বছর যে হাজার হাজার একর জমির ফসল নষ্ট হলো, বাগানের আম নষ্ট হলো, তার প্রতিকার কী। মাছ চাষের নামে যাঁরা অবৈধ পুকুর খনন করেন, বিলের কালভার্ট বন্ধ করে দিয়ে মাছ চাষ করেছেন, তাঁদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন