দেশের ‘আর্থ-সামাজিক অবস্থা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে’ আগামী ১৯ আগস্ট থেকে কয়েকটি শর্তে পর্যটনকেন্দ্র, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদনকেন্দ্রও খুলে দিচ্ছে সরকার। সেদিন থেকে সব গণপরিবহনই সড়কে নামতে পারবে। করোনাভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে ঈদের পর ২৩ জুলাই থেকে শুরু হওয়া লকডাউনের বিধি-নিষেধ ১১ আগস্ট থেকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তুলে নেওয়া হয়।
শিল্প-কারখানা খোলা রয়েছে গত ১ আগস্ট থেকেই। এখন বাকি থাকছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ধাপে ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। আগামী সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ব্যাপারে চলছে বিভিন্ন পর্যায়ে চিন্তা-ভাবনা। এ ছাড়া করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে একই সময়ে এবারের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সরাসরি ক্লাস শুরুর ব্যাপারটিও ভাবনায় থাকছে। তবে মধ্য নভেম্বরে ছোট পরিসরে এসএসসি এবং ডিসেম্বরের শুরুতে এইচএসসি পরীক্ষা শেষে পুরোদমে স্কুল-কলেজও খুলে দেওয়ার বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা চলছে।
গত দেড় বছরে বিধি-নিষেধ বা লকডাউনের সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খুললেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের শিক্ষা খাত। একদিকে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে যেতে পারেনি। অন্যদিকে অনলাইনে ক্লাস করতে গিয়ে নানা সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে। শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের যে আনন্দ শিক্ষকরা তা পাননি। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে শ্রেণিকক্ষে যে সম্পর্কটি তৈরি হয়, তা অনলাইনে সম্ভব নয়। অন্যদিকে এরই মধ্যে এইচএসসি ও এসএসসিতে অটো পাস দিলেও উচ্চশিক্ষায় তারা ভর্তি হতে পারেনি।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন পর্যন্ত ভর্তিপ্রক্রিয়া শুরু করতে পারেনি। অন্যদিকে আগের বছর যাঁরা ভর্তি হয়েছিলেন, তাঁদের জীবন থেকে হারিয়ে গেছে একটি বছর। এই সময়ে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট অনেককেই চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়তে হয়েছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক কিন্ডারগার্টেন বন্ধ হয়ে গেছে। এমপিওভুক্ত নয় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের এমন অনেক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের পেশা বদল হয়ে গেছে। শিক্ষক পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ নিয়েছেন, এমন খবরও এসেছে গণমাধ্যমে। আবার শিক্ষার্থীদের মানসিকতায়ও বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। তাদের আচরণেও পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।
এ অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্রুত খুলে দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ব্যাপকভাবে টিকা নিচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯০ শতাংশ শিক্ষকও টিকা নিয়ে নিয়েছেন। সরকারি পর্যায়ের প্রায় সব শিক্ষকই টিকা নিয়েছেন। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাড়ে তিন লাখেরও বেশি শিক্ষক-কর্মচারী টিকা নিয়েছেন। এ অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার শর্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার বিষয়টি আন্তরিকভাবে বিবেচনা করা যেতে পারে বলে আমরা মনে করি।