কাঁচাবাজার বা নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের বাজার চূড়ান্ত রকম অস্থির হয়ে উঠেছে। ফলে নিম্ন আয়ের মানুষ চোখে অন্ধকার দেখছে। অনেকেই মাছ-মাংস খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। আমিষের সামান্য জোগান পেতে সপ্তাহে দুই-এক হালি ডিম কিনত যেসব পরিবার, তারাও এখন ডিম কেনা ছেড়ে দিয়েছে।
বাজারে গিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বললে এমন ধারণাই পাওয়া যায়।
দিন কয়েক আগে ডিমের দাম ডজনপ্রতি ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায় উঠে গিয়েছিল। গত শুক্রবার সেই দাম কিছুটা কমে হয়েছে ১৪৮ থেকে ১৫০ টাকা। ব্যবসায়ীরা জানান, ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষ ডিম কেনা কমিয়ে দিয়েছে। ফলে বাজারে ডিমের চাহিদা অনেক কমে গেছে। সম্ভবত সে কারণেই ডিমের দাম সামান্য কমেছে। একই অবস্থা বিভিন্ন ধরনের মুরগির দামেরও। দাম অনেকটা বেড়ে গিয়ে গত দুই দিনে দাম সামান্য কমেছে। এ জন্য পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, খামারেই ডিম, মুরগির দাম বেড়ে গেছে।
আর উৎপাদকরা বলছেন, অস্বাভাবিক দাম বাড়ার জন্য মূলত দায়ী মধ্যস্বত্ব্বভোগীরা। অন্যদিকে বাজারে শাক-সবজিসহ প্রতিটি জিনিসের দামই ঊর্ধ্বমুখী। কম দামের মাছ তেলাপিয়া, পাঙ্গাশও কিনতে পারছে না নিম্ন আয়ের মানুষ। ক্রেতাদের অভিযোগ, দুই সপ্তাহ আগেও যে তেলাপিয়া তারা কিনেছে ১৫০ টাকা কেজি দরে, এখন সেই মাছের দাম ২০০ টাকার বেশি। পাঙ্গাশের কেজিও ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। প্রতিদিনই একটু একটু করে বাড়ছে চালের দাম। সয়াবিন তেল, চিনি, পেঁয়াজ, আলুসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যের দামও ঊর্ধ্বমুখী।
বাজারে এভাবে দাম বাড়ার জন্য ব্যবসায়ীদের অজুহাতের অভাব নেই। গত ফেব্রুয়ারির পর থেকে দাম বাড়ার একটি প্রধান অজুহাত ছিল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। অবস্থাটা এমন ছিল, যেন আলু-পেঁয়াজের জন্যও আমরা দেশ দুটির ওপর নির্ভরশীল ছিলাম। গত জুন মাস থেকে তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল ডলারের বিপরীতে টাকার দাম কমে যাওয়া। আর এখন সবচেয়ে বড় অজুহাত হলো জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়া। কিন্তু বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সব কটি কারণ মিলিয়ে বাজারে কোনো পণ্যের যতটুকু দাম বাড়ার কথা, বাস্তবে দাম বেড়েছে তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। তাঁদের মতে, বাজারে এমন অস্বাভাবিক দাম বাড়ার জন্য কিছু ব্যবসায়ীর ‘অতি লোভী’ মানসিকতাই দায়ী।
জানা যায়, চট্টগ্রামে ডিম ব্যবসায়ীদের সমিতি প্রতি রাতে ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেয়। ব্যবসায়ীরা সবাই সেই দামে ডিম বিক্রি করেন। আর ক্রেতারা প্রয়োজন অনুযায়ী বাধ্য হয় অতিরিক্ত দামে ডিম কিনতে। এই প্রক্রিয়া শুধু চট্টগ্রামে নয়, রাজধানীসহ দেশের সর্বত্রই কমবেশি বিদ্যমান।
ভোক্তা বা চূড়ান্ত ক্রেতার স্বার্থ রক্ষা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিন্তু বাংলাদেশে বাজার নিয়ন্ত্রণের সে রকম ব্যবস্থা প্রায় অনুপস্থিত। তাই পাইকারি হোক আর খুচরাই হোক, মধ্যস্বত্বভোগীরা সুযোগ পেলেই ক্রেতাদের পকেট কাটে। সাম্প্রতিক সময়ে কিছু অজুহাত পাওয়ায় তাদের সেই প্রচেষ্টা অত্যন্ত বেদনাদায়ক হয়ে উঠেছে। আমরা চাই, দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ গ্রহণ করুক এবং ক্রেতাদের মধ্যে ন্যূনতম স্বস্তি ফিরে আসুক।