জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মাটির অতিরিক্ত ব্যবহার, মাটির ক্ষয়, দূষণ, লবণাক্ততা, মাটির পুষ্টি উপাদানের ক্ষয়-এসব সমস্যাও খাদ্য নিরাপত্তার ওপর প্রভাব ফেলে। জানা যায়, দেশে দিন দিন কমছে জমির উর্বরতা। ফলে বেড়ে যাচ্ছে ধানের উৎপাদন খরচ। এদিকে কমছে উৎপাদকদের লাভের অংশও।
এজন্য ধান চাষ অব্যাহত রাখা কৃষকদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) চার দিনব্যাপী বার্ষিক গবেষণা সম্মেলনের শেষদিনে এক গবেষণায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। গবেষণায় দেখা যায়, ১৯৯১ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত জমির উর্বরতা ছিল ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
তবে ২০০১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত উর্বরতা শক্তি কিছুটা বেড়ে হয়েছিল ৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। কিন্তু ২০১১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ব্যাপক কমে উর্বরতা শক্তি দাঁড়ায় শূন্য দশমিক ৪৪ শতাংশে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সার, কীটনাশক এবং ভূগর্ভস্থ পানির অত্যধিক ব্যবহার পরিবেশের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। গবেষণায় আরও বলা হয়, ধীরে ধীরে কমছে শ্রমিকের দক্ষতাও।
গবেষণায় বলা হয়েছে, ধানের উৎপাদন খরচ বাড়ছে। প্রতিকেজি চালের উৎপাদন খরচ ২০১২ সালে ছিল ১০ টাকা ৫১ পয়সা। সেটি বেড়ে ২০১৫ সালে হয়েছে ১১ টাকা ৬৭ পয়সা, ২০১৮ সালে ১২ টাকা ৮৮ পয়সা। অন্যদিকে এক কেজি চাল বিক্রি করে লাভ হতো ২০১২ সালে ১৬ টাকা ১৭ পয়সা; ২০১৫ সালে ১৬ টাকা ৫২ পয়সা এবং ২০১৮ সালে ১৭ টাকা ৪৮ পয়সা। উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণে ধান উৎপাদন করে কৃষকের লাভের অংশ দিন দিন কমে যাচ্ছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে কৃষক ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন। সম্মেলনে উপস্থাপিত গবেষণা প্রতিবেদনে দেশের কৃষি খাতের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করা হয়।
তবে কৃষি খাতে বিদ্যমান নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও এ খাতের টেকসই উন্নয়ন অব্যাহত রাখা সম্ভব। টেকসই উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে হলে এ খাতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর পাশাপাশি কৃষকবান্ধব বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে। ফসল উৎপাদনের মৌলিক উপাদান মাটি ও পানির দূষণ ঠেকাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশের উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততা সমস্যার কারণে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। আগামীতে এ ধরনের আরও যেসব সমস্যা ফসল উৎপাদনে প্রভাব ফেলতে পারে, তা চিহ্নিত করে সমস্যার সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
শস্যের নতুন জাত আবিষ্কার করতে হবে। জমির উর্বরা শক্তি বাড়াতে মাটির স্বাস্থ্য উন্নত করা দরকার। বস্তুত এ সবকিছুর জন্য প্রয়োজন গবেষণা বাড়ানো। উর্বরতা পুনরুদ্ধারে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, কৃষকদেরও সে বিষয়ে সচেতন করে তুলতে হবে। সময়মতো সহজ শর্তের ঋণ ও প্রশিক্ষণ না পেলে কৃষকদের কাঙ্ক্ষিত উন্নতি সম্ভব হবে না। কৃষক যাতে উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য পান, এটাও নিশ্চিত করতে হবে। এ খাতের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।