গত মে মাসে ভারতে পাচার করা বাংলাদেশি এক তরুণীকে যৌন নির্যাতন করে টিকটক হৃদয়সহ তার সহযোগীরা সেই দৃশ্য ধারণ করে ছড়িয়ে দেয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এর জেরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয় উভয় দেশে। বেঙ্গালুরু পুলিশ ২৮ মে তাদের গ্রেপ্তার করে। পাচারের শিকার এক কিশোরী দেশে ফেরার পর হাতিরঝিল থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ আইনে ১২ জনকে আসামি করে মামলা করে। এই আসামিদের মধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে টিকটক ভিডিও তৈরির ফাঁদে ফেলে তরুণীদের ভারতে পাচার করা হচ্ছে। পাচারকারীচক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। জানা যায়, ওই কিশোরীসহ দেড় হাজারের বেশি নারীকে তারা ভারতে পাচার করেছে। তরুণী ও কিশোরীদের ভিডিও শেয়ারিং সাইট টিকটক ও লাইকিতে অভিনয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ভারতীয় দালালের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিনদেশি অ্যাপ টিকটক, লাইকি, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউবসহ প্রচার ও যোগাযোগের প্রায় সব মাধ্যমে ওত পেতেছে পাচারকারীচক্র। সম্প্রতি এই চক্রের মাধ্যমে পাচার হওয়া আরেক নিখোঁজ কিশোরীর বিষয়ে জানতে পেরেছে পুলিশ। ওই কিশোরী এখনো ভারতে অবস্থান করছে বলে তার বাবা মেয়েকে উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন। থানায় মামলাও দায়ের করেছেন।
সাইবার ক্রাইম বা তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধও বেড়ে চলেছে। মানুষ এ ধরনের অপরাধের শিকার হচ্ছে। ইন্টারনেটে আপত্তিকর ছবি প্রচার, ব্ল্যাকমেইল, প্রতারণার ফাঁদ পাতা হচ্ছে।
এসব অপরাধের পরিধি বাড়ছে। অনলাইনভিত্তিক কিশোর গ্যাং যৌন হয়রানি, যৌন নিপীড়ন, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, রাহাজানি থেকে শুরু করে হত্যাকাণ্ডের মতো বড় অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, ইন্টারনেটভিত্তিক প্ল্যাটফর্মে গড়ে ওঠা কিশোর গ্যাংয়ের ভার্চুয়াল বিরোধ রূপ নিচ্ছে বাস্তব সংঘর্ষে।
পোস্ট কিংবা লাইক-কমেন্টের মতো তুচ্ছ বিষয়েও বড় সহিংসতা হয়ে যাচ্ছে। ভার্চুয়াল মিডিয়া থেকে অনেকেই জড়িয়ে যাচ্ছে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। টিকটক, লাইকির মতো ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয়ে শিখছে অপরাধের নানা কৌশল। এমনকি এসব প্ল্যাটফর্মে সংঘবদ্ধ হয়ে অপরাধে জড়াচ্ছে অনেক গ্রুপ। বিভিন্ন এলাকায় আগে থেকেই সক্রিয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা করোনাকালে অনলাইনকেই বেছে নিয়েছে যোগাযোগের বড় মাধ্যম হিসেবে। অনেকেই চুরি-ডাকাতির মতো অপরাধেও জড়াচ্ছে।
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন তথ্য-প্রযুক্তির সুবাদে সারা বিশ্ব হাতের মুঠোয়। যা পাচ্ছে লুফে নিচ্ছে কিশোররা। প্রযুক্তির সদ্ব্যবহারের জায়গাটা তারা গুলিয়ে ফেলছে। এ জন্য অভিভাবকদের দায় আছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। রাষ্ট্রীয় তৎপরতা জোরদারের পাশাপাশি সামাজিক ও পারিবারিক অনুশাসনের বিষয়ে জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।