যে বয়সে বই-খাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা, মাঠে খেলার কথা, সৃজনশীল কাজের মধ্য দিয়ে নিজেদের প্রতিভা বিকাশের পথে এগিয়ে যাওয়ার কথা—সেই বয়সের কিশোররা এখন ছুরি-চাকু, এমনকি আগ্নেয়াস্ত্র হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। মাস্তানি করে, মাদকের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে। রাস্তাঘাটে ছিনতাই করে। মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে। বাধা দিলে রক্তারক্তি, খুুনাখুনি করে।
উত্তরা, তেজগাঁও, যাত্রাবাড়ীসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এরা গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে। শুধু রাজধানী কেন, সারা দেশেই এদের বেপরোয়া উত্থান লক্ষ করা যায়। বরগুনায় রিফাত হত্যা মামলার ২২ আসামির ১৪ জনই ছিল কিশোর। চট্টগ্রামেও একাধিক খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে কিশোর অপরাধীরা। বিভিন্ন সময় পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, শুধু উত্তরা এলাকায়ই রয়েছে এক ডজনের বেশি কিশোর গ্যাং। মাঝেমধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো অভিযান চালালেও কিশোর অপরাধ কমছে না, বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে।
কিশোর অপরাধ এভাবে বেড়ে যাওয়ার জন্য অনেকেই মূল্যবোধের অবক্ষয়কে দায়ী করে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরাখবর থেকে জানা যায়, মাদক কারবার, এলাকায় প্রভাব বিস্তারসহ নানা কারণে প্রভাবশালী ‘বড় ভাইদের’ ইন্ধনে গড়ে ওঠে এসব কিশোর গ্যাং। এই বড় ভাইদের মধ্যে যেমন মাদক কারবারি আছেন, তেমনি আছেন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরাও। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে থাকা ‘বিএনপি বস্তির’ কিশোরদের দিয়ে অপরাধ করাচ্ছে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ভাতিজা ও ভাগ্নে। এখানে প্রায় প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে ইয়াবা, গাঁজাসহ অন্যান্য মাদক। চলে অবাধে জুয়া খেলা। স্থানীয় অধিবাসীরা জানায়, এই কিশোরদের কাছে তারা অসহায়। প্রতিবাদ করলে চরম মূল্য দিতে হবে।
সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন, দুর্বল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির পাশাপাশি পারিবারিক শিক্ষার অভাবই কিশোর অপরাধ বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম কারণ। সন্তানের শিক্ষা ও চরিত্র গঠনের প্রতি অভিভাবকদের যতটা মনোযোগ দেওয়া দরকার, তাঁরা তা দেন না; বরং সন্তান যা চায়, তা-ই দিয়ে তাকে সন্তুষ্ট করতে চান। মোটরসাইকেল কিনে দেওয়া হয়; আর তা নিয়ে এই কিশোররা রাস্তায় রীতিমতো ত্রাসের সৃষ্টি করে। একসময় এই কিশোররা পরিবারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। হয়ে ওঠে নেশাগ্রস্ত এবং সম্পূর্ণরূপে একেকজন অপরাধী। তখন শুধু বাইরের মানুষ নয়, নিজের মা-বাবাকে খুন করতেও তারা দ্বিধা করে না।
বরগুনার রিফাত হত্যা মামলার রায়ে আদালতের একটি পর্যবেক্ষণে বলা হয়, কিশোরদের অপরাধের ক্ষেত্রে কম শাস্তির বিধানের অপব্যবহার হচ্ছে। বিষয়টি আবার বিবেচনা করা যেতে পারে। কৈশোরের বয়সসীমা কমানো যায় কি না, তা-ও ভেবে দেখতে হবে। পাশাপাশি কিশোর অপরাধে ইন্ধনদাতাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন