এতে নদীটির প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য চরম হুমকিতে পড়েছে।
কিন্তু বুড়িগঙ্গার এমন অবস্থা কেন হলো? জবাবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, রাষ্ট্রের দীর্ঘ অবহেলা, লোভী মানুষের অত্যাচার, পয়োবর্জ্যসহ শিল্প ও গৃহস্থালি বর্জ্যের অবাধ ডাম্পিং, নদীর তলদেশে পলিথিনের ১০ ফুটের বেশি আস্তরণ, প্রয়োজনীয় পরিমাণে খনন না হওয়া ইত্যাদি বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী। অব্যাহতভাবে দখল ও ভরাট হওয়ার কারণে বছরের বেশির ভাগ সময় নদীতে পানিপ্রবাহ থাকে না বললেই চলে। হাজারীবাগের ট্যানারিশিল্প সরিয়ে নেওয়া হলেও এখনো অনেক টেক্সটাইল, ডায়িং, প্রিন্টিং ও ওয়াশিং কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য নদীতে পড়ছে।
গবেষণায় বলা হয়, জলাভূমিতে জীব বা অণুজীবের জীবনধারণের জন্য প্রতি লিটার পানিতে ন্যূনতম পাঁচ মিলিগ্রাম দ্রবীভূত অক্সিজেনের প্রয়োজন। কিন্তু বছরের চার ঋতু অর্থাত্ হেমন্ত, শীত, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে বুড়িগঙ্গায় জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম অক্সিজেনও থাকে না। গ্রীষ্মকালে দ্রবীভূত অক্সিজেন ৩-এর কাছাকাছি থাকলেও বাকি তিন ঋতুতে তা আরো কমে ২-এর নিচে নেমে আসে। সবচেয়ে নাজুক অবস্থা হয় হেমন্তকালে। এ সময় দ্রবীভূত অক্সিজেন ১-এরও নিচে নেমে আসে।শুধু বুড়িগঙ্গা নয়, ঢাকার চারপাশে থাকা বাকি তিনটি নদীর অবস্থাও শোচনীয়। নাগরিকদের দাবি এবং উচ্চ আদালতের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা সত্ত্বেও কাজের কাজ খুব কমই হয়েছে। এসব নদীর নাব্যতা উন্নয়নে অতীতে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, কিন্তু নদীর নাব্যতা কিংবা প্রতিবেশ ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়নি বললেই চলে।পৃথিবীতে খুব কম শহর আছে, যার চারপাশে চারটি নদী রয়েছে। ঢাকা এমন একটি সৌভাগ্যবান শহর হওয়া সত্ত্বেও সঠিক পরিকল্পনা ও সদিচ্ছার অভাবে নদীগুলো মরছে। ঢাকা থাকছে নিকৃষ্টতম শহরের তালিকায়। ঢাকাবাসীর পানির চাহিদা মেটানোর জন্য পদ্মা ও মেঘনা থেকে পানি আনার কথা ভাবতে হয়। আমরা আশা করি, বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর উন্নয়নে সরকার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।