নদীদূষণ কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না। শিল্প-কারখানার কিছু মালিক দেশের আইনকানুনের কোনো তোয়াক্কা করেন না। নীতি-নৈতিকতা, বিবেক বা দায়িত্ববোধের পরিচয়ও তাঁরা দেন না। প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে ফুলজোড় নদীতে দুটি কারখানার রাসায়নিক বর্জ্য ফেলায় নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে গেছে।
এ কারণে নদীর প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মাছসহ সব জলজ প্রাণী মরে গেছে। নদীতে গোসল করার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ছে মানুষজন। পানি খেয়ে মারা যাচ্ছে গবাদি পশু।
জানা যায়, দুই শতাধিক মৎস্য চাষি ফুলজোড় নদীর রায়গঞ্জ উপজেলার চান্দাইকোনা থেকে নলকা পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার অংশে খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষ করেন।
মৎস্য চাষিদের মতে, এখানে দুই হাজারের বেশি খাঁচা ছিল এবং প্রতি খাঁচায় ৩০ থেকে ৪০ মণ করে মাছ ছিল। তাঁদের অভিযোগ, চার দিন আগে নদীর উজানে বগুড়ার শেরপুরে অবস্থিত মজুমদার ফুড প্রডাক্টস এবং এসআর কেমিক্যাল কারখানার বর্জ্য অতিরিক্ত পরিমাণে নদীতে ফেলায় পানি বিষাক্ত হয়ে নীল রং ধারণ করে এবং ২৫ কিলোমিটার এলাকায় সব মাছ মরে যায়।শুধু মাছ নয়, অন্যান্য জলজ প্রাণীও মরে ভেসে উঠেছে। এ পরিস্থিতিতে কিছুদিন নদীর পানি ব্যবহার না করার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।মৎস্য চাষিদের দাবি, তাঁদের প্রায় ১৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। অনেকে ঋণের অর্থে মাছ চাষ করেছিলেন। তাঁরা এখন পুরোপুরি অসহায় হয়ে পড়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষিরা গত বুধবার অভিযুক্ত দুটি কারখানার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন এবং উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।সিরাজগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাঁরা ফুলজোড় নদী থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করেছেন। প্রাথমিক তদন্তে কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য ফেলার প্রমাণও মিলেছে। তিনি জানান, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিষয়টি উচ্চ পর্যায়ে অবগত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও পরিবেশ অধিদপ্তরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।নদী রক্ষায় দেশে অনেক আইন রয়েছে। উচ্চ আদালত নদীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করেছেন। নদী রক্ষায় কমিশন রয়েছে। দূষণ রোধে পরিবেশ অধিদপ্তর রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনেরও দায়িত্ব রয়েছে। তার পরও নদীর ওপর অত্যাচারের কোনো কমতি নেই।নদীর পার দখল করে স্থাপনা তৈরি করা হচ্ছে। বাঁধ দিয়ে প্রবাহ বন্ধ করা হচ্ছে। কঠিন বর্জ্য ফেলে ভরাট করা হচ্ছে।অবৈধ বালু উত্তোলন করে নদীভাঙন ত্বরান্বিত করা হচ্ছে। শিল্প-কারখানার রাসায়নিক বর্জ্য ফেলে নদীর পানি বিষাক্ত করা হচ্ছে। তাহলে এত আইন ও এত সংস্থার নজরদারি কোথায়? আমরা চাই, ফুলজোড় নদীর দূষণের বিষয়টি তদন্ত করে দূষণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষিদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হোক।