দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বিপজ্জনক পর্যায়ে রয়েছে। তা সত্ত্বেও মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে রয়েছে চরম উদাসীনতা। লকডাউন দিয়েও মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে অর্থনীতি ও মানুষের জীবন-জীবিকায় লকডাউনের ক্ষতিকর প্রভাব ক্রমেই প্রকট হচ্ছে। মানুষ ক্রমেই অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। এ অবস্থায় লকডাউন শেষ হওয়ার আগেই গার্মেন্টসহ রপ্তানিমুখী কলকারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে।
হঠাৎ কারখানা খুলে দেওয়ায় গত ঈদে ঢাকার বাইরে যাওয়া লাখ লাখ মানুষ যে যেভাবে পারে ঢাকায় ফিরেছে। পথে ছিল না স্বাস্থ্যবিধির বালাই। এসব কারণে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, আরো কিছুদিন সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকতে পারে। গত সোমবার সকাল ৮টার আগের ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার মানুষ।
আবার এরই মধ্যে শুরু হয়েছে ডেঙ্গুর ব্যাপক সংক্রমণ। একই সময়ে সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে আরো ২৮৭ জন, যার মধ্যে ২৭৯ জনই ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, করোনা ও ডেঙ্গু রোগী এভাবে বাড়তে থাকলে দ্রুতই হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়তে পারে।
করোনাভাইরাসে টিকার কার্যকারিতা নিয়ে এর মধ্যে বাংলাদেশে দুটি গবেষণা হয়েছে। আইইডিসিআরের গবেষণায় উঠে এসেছে, যাঁরা টিকা নিয়েছেন তাঁদের তুলনায় যাঁরা টিকা নেননি, তাঁদের মৃত্যুঝুঁকি ১০ গুণ বেশি। অন্যদিকে বিএসএমএমইউয়ের অপর গবেষণায় জানা গেছে, যাঁরা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছেন, তাঁদের ৯৮ শতাংশেরই শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। আইইডিসিআরের গবেষণা বলছে, যাঁরা টিকা নিয়েছেন তাঁদের মৃত্যুহার যেমন কম, তেমনি শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত জটিলতাও কম এবং তাঁদের হাসপাতালে ভর্তির হারও অনেক কম।
উপসংহারে আইইডিসিআরের পক্ষ থেকে দ্রুত পূর্ণ ডোজ কভিড টিকা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও মনে করছেন, লকডাউন দিয়ে আর বেশি সময় মানুষকে ঘরে আটকে রাখা যাবে না। তাই দ্রুততম সময়ে বেশির ভাগ মানুষকে টিকা কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসাটাই হবে সর্বোত্তম উপায়। কিন্তু আমাদের টিকা কর্মসূচি এখনো কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি।
টিকা প্রদানের গতি অনেক বাড়ার পরও গত সোমবার প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলিয়ে টিকা দেওয়া হয়েছে তিন লাখ ছয় হাজার ৯৪৭ জনকে। এই হারে ১২ কোটি মানুষকে টিকা দিতে সময় লাগবে তিন বছরের বেশি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী আগামী ৭ আগস্ট থেকে সপ্তাহে এক কোটি মানুষকে টিকা দেওয়ার যে লক্ষ্য ঘোষণা করেছেন, সেটাই কাঙ্ক্ষিত এবং যেকোনো মূল্যে সেই লক্ষ্য অর্জন করতে হবে।
আমরা বিশ্বাস করি, করোনা ও ডেঙ্গু মিলিয়ে যে আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা থেকে দেশের মানুষকে রক্ষায় সরকার সম্ভাব্য সব কিছু করবে। পাশাপাশি মানুষকেও আরো সচেতন হতে হবে এবং সরকারের গৃহীত কর্মসূচি সফল করতে সবাইকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।