করোনা মহামারির কারণে শুধু প্রাণহানি হচ্ছে না, দেশের অর্থনীতিরও ভয়াবহ রকমের ক্ষতি হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানা—সর্বত্রই এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পও তার বাইরে নয়। গত মার্চে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে এ পর্যন্ত শুধু পোশাকশিল্পেই লক্ষাধিক শ্রমিক বেকার হয়েছেন। অনেক শ্রমিক সংগঠনই দাবি করেছে, চাকরি হারানোর এই সংখ্যা আরো অনেক বেশি এবং বেকার হয়ে পড়া শ্রমিকদের ৬৫ শতাংশের বেশি গ্রামে ফিরে গেছে। সেখানেও পরিবার-পরিজন নিয়ে তাঁরা খুব বিপদে আছেন। এমনিতেই গ্রামে বিকল্প কাজের সুযোগ খুব কম, তার ওপর কয়েক দফা বন্যায় গ্রামীণ অর্থনীতিতে রীতিমতো ধস নেমেছে। এই অবস্থায় গার্মেন্ট শ্রমিকদের, বিশেষ করে নারী শ্রমিকদের পুনর্বাসনে বিশেষ কর্মসূচি নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
করোনা মহামারি শুরু হওয়ায় ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। গার্মেন্ট কারখানাগুলোও বন্ধ হয়ে যায়। এপ্রিল মাসে সীমিত পরিসরে কিছু গার্মেন্ট কারখানা খুলতে শুরু করলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অজুহাতে মালিকরা অনেককেই আর কাজে নেননি। অনেক মালিকের বিরুদ্ধে এই সুযোগে নামমাত্র মজুরিতে শ্রমিকদের খাটিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এসব কারণে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যান এ খাতের বেশির ভাগ শ্রমিক। বাধ্য হয়ে পুরুষ শ্রমিকদের অনেকেই অটোরিকশাা চালানো, বিভিন্ন পণ্যে হকার হওয়া কিংবা গ্রামে গিয়ে মাছ-মুরগির খামার দেওয়াসহ বিকল্প পেশা বেছে নিতে শুরু করেন। ধারণা করা হচ্ছে, তাঁদের অনেকেই আর পুরনো পেশায় না-ও ফিরতে পারেন। সাম্প্রতিক সময়ে পোশাক খাত আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। বেশির ভাগ কারখানাই আবার পুরোদমে চালু হয়ে গেছে। সেসব কারখানায় পুরনো অনেক শ্রমিক ফিরে না আসায় শ্রমিকের সংকটও তৈরি হয়েছে। অনেক কারখানায়ই নতুন করে শ্রমিক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। শ্রমিক নিয়োগ ও পুরনো শ্রমিকদের কাজে ফিরিয়ে নেওয়ার মধ্যে শৃঙ্খলা রক্ষা করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
পৃথিবীব্যাপী এখনো এক আতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস। বিশ্বব্যাপী আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে তিন কোটি। মারা গেছে ১০ লাখের বেশি মানুষ। অনেক দেশে সংক্রমণ কমে গিয়ে আবার দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ মারাত্মক রূপ নিয়েছে। নতুন করে লকডাউন বা বিধি-নিষেধ আরোপ করা হচ্ছে। বাংলাদেশে গত কয়েক দিন সংক্রমণের হার কিছুটা কম ছিল। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, শিগগিরই দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণ শুরু হতে পারে।
সম্প্রতি পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) যৌথ গবেষণায় দেখা যায়, করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে তৈরি হওয়া পরিস্থিতির প্রভাবে শহরের নিম্ন আয়ের মানুষের আয় কমেছে ৮২ শতাংশ আর গ্রামাঞ্চলের নিম্ন আয়ের মানুষের আয় কমেছে ৭৯ শতাংশ। দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণ শুরু হলে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা ভাবতেও কষ্ট হয়। এখনই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হবে সেই বিপজ্জনক পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন