ধর্ষণের ঘটনা ও ভয়াবহতা বেড়ে যাওয়ায় সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি থেকে শাস্তি বাড়ানোর দাবি ওঠার পর গত বছর ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে সংশোধিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন জাতীয় সংসদে পাস হয়। কিন্তু শুধু আইন পাস হলেই যে এই সামাজিক ব্যাধি থেকে মুক্তি মিলবে না, এখন তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, করোনাকালেও বাংলাদেশে বেড়েছে ধর্ষণ, নির্যাতন ও পারিবারিক সহিংসতা। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২০ সালে ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় এক হাজার ৬২৭ জন নারী।
এর মধ্যে ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যার শিকার হয় ৫৩ জন এবং ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করে ১৪ জন। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের হিসাব অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত তিন হাজার ৬৪ জন শিশু ও নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছে। গণধর্ষণের শিকার ২২৩ জনসহ মোট ধর্ষণের শিকার হয়েছে এক হাজার ২১৬ জন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ২৮ জনকে। যৌন নিপীড়ন ও শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছে ১০১ জন নারী। নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুদের জন্য গঠিত ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেলে জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত শারীরিক নির্যাতনের শিকার ৯ হাজার ৭৮ জন এবং যৌন নিপীড়নের শিকার এক হাজার ১৭৭ জন সেবা নিয়েছে।
প্রকাশিত প্রতিবেদন ও পরিসংখ্যান করোনার বছরে নারী নির্যাতনের ভয়াবহতার চিত্রই তুলে ধরছে। কেন এমন ঘটছে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যক্তি সম্পর্কে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সহনশীলতা হ্রাস পেয়েছে। ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ বিচার পেতে বিলম্ব হওয়া। নারী ও শিশু ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার পেছনে সামাজিক, রাজনৈতিক ও পারিবারিক অবক্ষয়কে দায়ী করছেন তাঁরা। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের মতো অপরাধ বন্ধ করতে আইনের সঠিক প্রয়োগ জরুরি।
সার্বিক পরিস্থিতি বলছে, মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় চরমে পৌঁছেছে। সমাজ ক্রমেই বর্বরতার চরমে চলে যাওয়ায় আমাদের সমাজের পরিচয়টাই যেন পাল্টে যাচ্ছে। সে কারণেই নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। বিলম্বিত বিচার কিংবা বিচারহীনতার কারণে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। নারীর প্রতি এই সহিংসতা কমাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে বলে মনে করেন সমাজ বিশ্লেষকরা। দ্রুততম সময়ের মধ্যে শাস্তি দৃশ্যমান করা গেলে এ ধরনের অপরাধ কমবে বলে আমরা মনে করি।