দুর্নীতি যেন আমাদের অক্টোপাসের মতো জড়িয়ে ধরেছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কিছু কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হলেও দুর্নীতি সেভাবে কমছে না। রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের বালিশকাণ্ড, সরকারি ভবন নির্মাণে রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহারসহ আরো কিছু ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। অবস্থা এমন হয়েছে যে উন্নয়ন প্রকল্প মানেই যেন দুর্নীতির আখড়া হয়ে উঠেছে।
এমনই দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ নির্মাণ প্রকল্পের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে। এর আগে বিভিন্ন সময়ে গঠিত তদন্ত কমিটির অনুসন্ধানেও অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। কিন্তু বেশির ভাগ অভিযুক্ত বহাল তবিয়তে আছেন। কেউ কেউ পুরস্কৃতও হয়েছেন।
প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০০৮ সালে। প্রথম দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৪ সাল এবং দ্বিতীয় দফায় ২০১৬ সাল করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাজ শেষ হয়নি। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের মতে, এ পর্যন্ত কাজ হয়েছে ৭০ শতাংশ। প্রথমে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। বিভিন্ন সময়ে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির সঙ্গে ব্যয়ও বেড়েছে। সর্বশেষ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৮২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।
প্রকল্পের কাজে বারবার অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। ২০১৮ সালে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন পরিচালক ড. আক্তারুজ্জামান যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তাতে বলা হয়, অনুমোদিত নকশা পরিবর্তন করে স্থানীয় কর্মকর্তা ও ঠিকাদাররা অনিয়ম করেছেন। এ জন্য কারো কোনো শাস্তি হয়নি। এরপর ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে হাসপাতালের একটি অংশের ছাদ ভেঙে একজন শ্রমিক নিহত এবং কয়েকজন আহত হন। সে সময় দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। উভয় কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে ঠিকাদার ও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে দায়ী করা হয়।
এ সময় তিনজন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও অন্য অভিযুক্তরা পার পেয়ে যান। চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য একনেক সভায় উপস্থাপন করা হলে প্রধানমন্ত্রী চরম অসন্তোষ প্রকাশ করে ফাইলটি ফেরত পাঠান এবং তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। তারই ভিত্তিতে গঠিত তদন্ত কমিটি সম্প্রতি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১২ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সব প্রকল্প পরিচালক ও কুষ্টিয়া গণপূর্ত বিভাগের অনেক কর্মকর্তা ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশে অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন।
দেশ থেকে দুর্নীতি দূর করার জন্য দুর্নীতিবিরোধী ব্যবস্থাকে শক্তিশালী ও কার্যকর করতে হবে। কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ নির্মাণ প্রকল্পে যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তাদের প্রত্যেককে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। প্রমাণ করতে হবে, দেশে দুর্নীতি করে পার পাওয়া যায় না। আমরা আশা করব, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।