সারা দেশেই নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বহু সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। বড় নদী, ছোট নদী, এমনকি বন, কৃষিজমি, খাল-বিলও বাদ যায় না এদের আগ্রাসী তৎপরতা থেকে। যেখানেই বালুর অস্তিত্ব পাওয়া যায়, সেখানেই এরা হামলে পড়ে। নদী থেকে এভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর ভাঙন ত্বরান্বিত হয়।
নদীর তীরে থাকা বাড়িঘর, ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এভাবে নদীভাঙনে প্রতিবছর শত শত পরিবার বাড়িঘর ও জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়। তবু থামে না অবৈধ বালু উত্তোলনের হিড়িক। বালু উত্তোলনকারীরা নানাভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয় লোকজন তাদের বাধা দিতেও ভয় পায়।
প্রশাসনও নানা কারণে থাকে নির্বিকার। প্রকাশিত খবরে জানা যায়, বগুড়ার শেরপুরে বাঙ্গালী নদী থেকে আবারও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন শুরু হয়েছে। সুঘাট ইউনিয়নের বিনোদপুর গ্রামে বাঙ্গালী নদীতে ড্রেজার বসিয়ে অব্যাহতভাবে বালু তোলা হচ্ছে। এতে নদীর তীরবর্তী ফসলি জমি ও বসতবাড়ি হুমকির মুখে পড়েছে।
প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, বাঙ্গালী নদীর একই স্থান থেকে অনেক দিন ধরেই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বালু উত্তোলনের সঙ্গে বেশ কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি জড়িত রয়েছেন। কিছুদিন আগে শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সানজিদা সুলতানা সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। আদালতের অভিযানের কথা শুনেই পালিয়ে যান বালু উত্তোলনকারীরা। ওই সময় বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত ড্রেজার ও প্লাস্টিকের পাইপ জব্দ করা হয়।পাশাপাশি বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত নজরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় এবং তাঁর নামে মামলা দেওয়া হয়। সেই মামলায় জামিন পেয়েই নজরুল ও তাঁর সহযোগীরা রবিবার সকাল থেকে আবার বালু উত্তোলন শুরু করেছে।সরকারি ও বেসরকারি উভয়ভাবে দেশে নির্মাণকাজের পরিধি বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে নির্মাণসামগ্রী হিসেবে বালুর চাহিদা। বৈধভাবে এবং পরিকল্পিত উপায়ে বালু উত্তোলনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় ক্রমেই বাড়ছে অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের প্রতিযোগিতা।তাদের দৌরাত্ম্য পদ্মা, মেঘনার মতো বড় নদীতে যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে অনেক ছোট নদীতেও। পরিবেশ রক্ষায় এবং নদীর তীরবর্তী জনজীবন রক্ষায় এ ব্যাপারে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে।আমরা আশা করি, বাঙ্গালী নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অতি দ্রুত বন্ধ করা হবে। কয়েক দিন পরপরই অভিযান চালাতে হবে। তাদের খননযন্ত্রসহ অন্যান্য সামগ্রী জব্দ ও ধ্বংস করতে হবে। বালু উত্তোলনকারীদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।