দেশে বেকার তরুণের সংখ্যা অনেক। সেই বেকারত্বের অভিশাপ ঘোচাতে কিংবা একটু উন্নত জীবন পেতে তাদের অনেকেই বিদেশে পাড়ি জমাতে উদগ্রীব থাকে। আর সেই সুযোগটাই নেয় মানব পাচারকারীরা। কিন্তু সেই মানবপাচার এখন আর নিরীহ পর্যায়ে নেই।এর সঙ্গে জড়িয়ে গেছে ভয়ংকর সব আন্তর্জাতিক অপরাধীচক্র। দেশে দেশে তাদের নেটওয়ার্ক রয়েছে। আছে বাংলাদেশেও। লোভনীয় বেতন, উন্নত থাকার ব্যবস্থাসহ নানা রকম প্রলোভন দিয়ে তরুণদের উদ্বুদ্ধ করা হয়।
নেওয়া হয় মোটা অঙ্কের অর্থ। এরপর বিদেশে নিয়ে আটকে রেখে বা জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করা হয়। নানা ধরনের আন্তর্জাতিক অপরাধীচক্রের কাছে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এমনকি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি করে দেওয়া হয়।
প্রায়ই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে এ ধরনের খবর প্রকাশিত হয়। তেমনই একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। ইরাকে প্রবাসী এক বাংলাদেশি যুবককে আটকে রেখে তার ওপর নির্যাতন করা হতো। নির্যাতনের ভিডিও পরিবারের কাছে পাঠিয়ে মুক্তিপণ আদায় করা হয়। মুক্তিপণ নিত দেশে থাকা নির্যাতনকারীদের এজেন্টরা।পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) বিভিন্ন জেলা থেকে এমন আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারকৃতরা সবাই সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য। তারা দীর্ঘদিন ধরে লোকজনকে বিদেশে পাঠানোর নামে প্রতারণা করে আসছিল।মানবপাচারের নামে নিকট অতীতে অনেক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে। মালয়েশিয়ায় পাঠানোর নাম করে অনেককে থাইল্যান্ডের জঙ্গলে নিয়ে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায় করা হয়েছে। নির্যাতনে মৃত্যু হলে তাদের ঠাঁই হতো গণকবরে।সেখানে এমন অনেক গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। কয়েক দিন আগে প্রকাশিত এক খবরে জানা যায়, এখন মিয়ানমারে আটকে রেখেও মুক্তিপণ আদায় করা হয়। এর আগে লিবিয়ায় অনেক বন্দিশিবির থাকার খবর প্রকাশিত হয়েছে। শুধু মুক্তিপণ আদায় নয়, ঝুঁকিপূর্ণভাবে মরুভূমি বা সাগর পাড়ি দিতে গিয়েও বহু মানুষের মৃত্যু হয়। তাই দীর্ঘদিন থেকেই মানবপাচার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হচ্ছে। আটজনকে গ্রেপ্তার একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।কিন্তু দেশজুড়ে পাচারকারীচক্রের এমন শত শত সদস্য রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তাই পাচারবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে এবং জোরদার করতে হবে।বেকারত্বের হার যত বেশি থাকবে, তরুণ-যুবকরা তত বেশি বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করবে—এটাই স্বাভাবিক। তারা যাতে প্রতারকের হাতে না পড়ে সেটা নিশ্চিত করতে হবে।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা অন্য কোনো মাধ্যম ব্যবহার করে কেউ যাতে প্রতারণা করতে না পারে সেদিকে নজর রাখতে হবে। স্বাভাবিক উপায়ে বিদেশে পাঠানোর সুযোগ বাড়াতে হবে। পাশাপাশি তরুণদের সচেতন করার উদ্যোগ নিতে হবে। সারা দেশে পর্যাপ্ত পরামর্শকেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে। যারা বৈধভাবে লোক পাঠায়, তাদের কর্মকাণ্ডও নজরদারিতে রাখতে হবে।