মূল্যবোধের অবক্ষয় ও সামাজিক অনুশাসন না থাকার পরিণাম বরাবরই ভয়াবহ হয়ে থাকে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সাম্প্রতিক সময়ে বখাটেপনার যেসব খবর আসছে, তা আমাদের ভাবিয়ে তোলে। স্কুল-কলেজগামী মেয়েরা বখাটেদের অত্যাচারের শিকার হচ্ছে। কোমলমতি মেয়েদের শারীরিকভাবে আঘাত করা হচ্ছে।
কক্সবাজারে আত্মীয়ের বাসা থেকে নিজের আশ্রয়ণ ভবনে ফেরার পথে ভাই-বোন বখাটের কবলে পড়েন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ‘বোরকা পরিহিত তরুণীকে খালি গায়ে আগলে রেখেছেন তাঁর ভাই। এক বখাটে গাছের ডালজাতীয় কিছু দিয়ে তাঁকে বেধড়ক মারধর করছে। তার পরও তরুণীকে আগলে রেখেছেন মারধরের শিকার যুবকটি।
মাঝেমধ্যে যুবকটিকে লাথি মারছে হামলাকারী। পরে খালি গায়ে আরেক বখাটে এসে কিল-ঘুষি ও লাথি মারছে তরুণীকে আগলে রাখা যুবকের ওপর। ঘটনাস্থলে ঘোরাঘুরি করে তৃতীয় আরেক বখাটে সহায়তা করছিল হামলাকারীদের। এরই মধ্যে দুই বখাটেকে আটক করেছে পুলিশ।
প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সামনে বখাটেদের উৎপাত বেড়েছে। গত এক মাসে অন্তত পাঁচটি ঘটনা অভিভাবকদের চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কায় ছাত্রীরাও এ নিয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। লিখিত অভিযোগও করতে পারছে না। প্রকাশিত আরেক খবরে বলা হয়েছে, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের জঙ্গলবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের চার শিক্ষিকাকে হেনস্তা করেছে বখাটেরা। শ্রেণিকক্ষে ঢুকে ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় শিক্ষিকাদের ওপর বখাটেরা চড়াও হয়েছে। এ ঘটনায় গত সোমবার বখাটেদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা।
এই সামাজিক ব্যাধি আমাদের অনেক অর্জন নষ্ট করে দিতে পারে। এসব ঘটনা আমাদের সামাজিক অবক্ষয়ের দিকটিই নতুন করে উন্মোচিত করছে। প্রতিকারহীনভাবে একের পর এক ঘটনা ঘটেই চলেছে। ঘটনাগুলো যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল বখাটেদের দৌরাত্ম্য থেমে নেই। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজে বের করা এখন একান্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
পারিবারিক ও সামাজিক অনুশাসন ফিরিয়ে আনা, মূল্যবোধ নতুন করে প্রতিষ্ঠা করা—এসব কথা অনেক বলা হয়েছে; কিন্তু কোনো কাজ হয়েছে বলে মনে হয় না। কাজেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে আরো কঠোর হতে হবে। বখাটেরাও কোনো না কোনো পরিবারের সদস্য। এই পরিবারগুলোর বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। পরিবারের কোনো সদস্য বখে গেলে তার দায়দায়িত্ব ওই পরিবারকেই বহন করতে হবে। আমরা আশা করি বখাটেপনা রুখতে সম্ভব সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।