বিদেশে অর্থপাচার বাংলাদেশের অর্থনীতির অগ্রগতির পথে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক। অর্থনীতিবিদদের মতে, মুদ্রাপাচার বন্ধ করা না গেলে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড কখনো কাঙ্ক্ষিত গতি পাবে না। উন্নয়ন টেকসই হবে না। এ নিয়ে প্রচুর আলোচনা হয়, লেখালেখি হয়, কিন্তু মুদ্রাপাচার কমে না।
ওয়াশিংটনভিত্তিক অর্থপাচারবিরোধী সংস্থা গ্লোবাল ফিন্যানশিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে মুদ্রাপাচারের পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে। আরো অনেক সংস্থার রিপোর্টেও উঠে এসেছে এমন তথ্য।খবরে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার অর্থ পাচার হয়। গত শনিবার এক সেমিনারে এই তথ্য জানান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।
বাংলাদেশ থেকে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক উভয়ভাবেই অর্থপাচার হয়। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে ব্যবসা বা অন্যান্য বৈধ কর্মকাণ্ডের আড়ালে যে অর্থ পাচার করা হয়, তাকেই সাধারণত আনুষ্ঠানিক উপায় হিসেবে গণ্য করা হয়। এ ছাড়া হুন্ডি, বিনিময় ও অন্যান্য উপায়ে যে অর্থ পাচার করা হয় সেগুলোকে অনানুষ্ঠানিক অর্থপাচার হিসেবে দেখা হয়। ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ থেকে মোট কী পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা সম্ভব নয়।
ব্যাংকের মতো আনুষ্ঠানিক মাধ্যম ব্যবহার করে ১৭ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ পাচারের কথা জানা যায়। বিভিন্ন ঘটনার ভিত্তিতে ধারণা করা যায়, বাংলাদেশ থেকে বছরে গড়ে ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে।তাঁর মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) দুর্নীতি ও অর্থপাচারে সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে। দেশের ব্যাংক খাতকে যে খাদের কিনারায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে, তার পেছনে মূলত দায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক। পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ ও কঠিন হলেও তা অসম্ভব নয়।
বাংলাদেশকে এ জন্য যেসব দেশে অর্থ পাচার করা হয়েছে সেসব দেশের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে হবে, চুক্তি সম্পাদন করতে হবে।আমাদের মনে রাখতে হবে, অর্থপাচার ও দুর্নীতি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। অর্থপাচার বন্ধ করা গেলে দুর্নীতিও কমে যাবে। তাই দুর্নীতি ও অর্থপাচার দুটোর বিরুদ্ধেই কঠোর হতে হবে। জানা যায়, বর্তমানে অর্থপাচারের শীর্ষে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা, তার পরই রয়েছেন সরকারি কর্মকর্তারা। উভয়ের মধ্যে নানা ধরনের যোগসাজশও রয়েছে।অর্থপাচারে বিএফআইইউ ছাড়াও অনেক ব্যাংক কর্মকর্তার জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। অতীতে যারা এসব করেছে যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। অর্থপাচার রোধের কাজে সংশ্লিষ্ট দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), সিআইডি, এনবিআর, অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস, বিএফআইইউ—এসব প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত উদ্যোগ নিশ্চিত করতে হবে। প্রত্যেককে জবাবদিহির মধ্যে আনতে হবে।