ডায়াবেটিস সারা জীবনের রোগ। একবার আক্রান্ত হলে ব্যক্তিকে বাকি জীবন চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হয়। নিয়মিত পরীক্ষা করাতে হয়, প্রয়োজনমতো ওষুধ খেতে হয় কিংবা ইনজেকশন নিতে হয়। রোগটি নিয়ন্ত্রণে না থাকলে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবনের ঝুঁকি তৈরি হবে। একই সঙ্গে হৃদরোগ, কিডনি, চোখের সমস্যাসহ আরো অনেক ধরনের রোগ দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসা ব্যয় ক্রমেই বাড়তে থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগী বা তাঁর পরিবার সেই ব্যয় বহনে অক্ষম হয়ে পড়ে। চিকিৎসা করানো বাদ দিতে বাধ্য হয় এবং রোগী ক্রমেই মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। এই পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে সাম্প্রতিক সময়ে ওষুধ ও আনুষঙ্গিক দ্রব্যাদির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রীর দাম বাড়ার কারণে রোগীপ্রতি মাসিক খরচ বেড়েছে দুই থেকে চার হাজার টাকা, যা অনেকের পক্ষেই বহন করা সম্ভব হচ্ছে না।
ডায়াবেটিসের চিকিৎসা ব্যয়ের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে অষ্টম স্থানে। এখানে রোগ শনাক্ত হওয়া থেকে শুরু করে পরবর্তী চিকিৎসার পুরো ব্যয় বহন করতে হয় রোগীকেই। ফলে অনেক রোগী চিকিৎসার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারে না।
ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিক ফেডারেশনের ২০২১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা এক কোটি ৩০ লাখের মতো। এর মধ্যে মাত্র ৫৯ লাখ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। বাকি ৭১ লাখ রোগী রয়ে গেছে চিকিৎসার বাইরে। চিকিৎসার বাইরে থাকা রোগীরা ডায়াবেটিস ছাড়াও দ্রুত অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়। তখন তাদের চিকিৎসার ব্যয় আরো বৃদ্ধি পায়, যা বহন করা তাদের পক্ষে আরো অসম্ভব হয়ে পড়ে।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে প্রায় সব ওষুধেরই দাম বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু যে পরিমাণ দাম বাড়ানো হয়েছে, তার যৌক্তিকতা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছে। বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ২১৪টি কম্পানি ওষুধ উৎপাদন ও বিপণন করছে। কম্পানিগুলো দেড় হাজার জেনেরিক নামের ওষুধ তৈরি করে, যেগুলো প্রায় ৩১ হাজার ব্র্যান্ড নামে বিপণন করা হয়।
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার আওতায় তালিকাভুক্ত ১১৭টি জেনেরিক নামের ওষুধের দাম ঔষধ প্রশাসন নির্ধারণ করে। বাকি ওষুধগুলোর দাম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোই নির্ধারণ করে। বাজারে কোনো কোনো ওষুধের দাম ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ছয় টাকার ট্যাবলেটের দাম হয়েছে ৯-১০ টাকা পর্যন্ত। কাঁচামালের দাম কি এতটাই বেড়েছে? সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রোগীদের সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে ওষুধের এই মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি যৌক্তিক করা প্রয়োজন।
আমরা মনে করি, সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ঔষধ প্রশাসন জীবন রক্ষাকারী ওষুধের মূল্য সাধারণ রোগীদের নাগালের মধ্যে রাখতে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।