মাঝেমধ্যে এমন কিছু ঘটনা ঘটে, যা আমাদের পুরো সমাজব্যবস্থাকে প্রশ্নের সম্মুখীন করে। ভাবতে অবাক লাগে, দিন দিন এই সমাজ কোথায় যাচ্ছে? কোন ভয়াবহ পরিণতির দিকে এগিয়ে চলেছি আমরা? মানুষ আলোকিত দিনের অপেক্ষায় থাকে। যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সমাজও আলোকিত হবে। মানুষের মধ্যে শ্রদ্ধাবোধ বাড়বে। এটাই তো কাঙ্ক্ষিত। দেশে শিক্ষিতের হার বেড়েছে, অর্থনৈতিক উন্নয়নও চোখে পড়ার মতো। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত মানবিক উন্নয়ন কি হয়েছে?
এমন প্রশ্ন আসে কিছু ঘটনা জানার পর। যেমনটি ঘটেছে রাজধানীর একেবারেই সন্নিকটবর্তী কালিয়াকৈরে। এক মা তাঁর সংসার খরচ নির্বাহের জন্য সুদে টাকা ধার নিয়েছিলেন। সেই টাকা শোধ করতে সময় বেঁধে দেন সুদের কারবারিরা। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সুদের কারবারিরা টাকা ফেরত দিতে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছিলেন। এ নিয়ে গত ১ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় ইউপি সদস্য মধ্যস্থতা করে টাকা পরিশোধের জন্য এক মাসের সময়ও বেঁধে দেন।
কিন্তু সময় শেষ না হতেই গত বৃহস্পতিবার সকালে টাকা আদায় করতে ওই নারী ও তাঁর মেয়েকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, মা-মেয়েকে ঘণ্টাখানেক নির্যাতন চালালেও কেউ এগিয়ে আসেনি তাঁদের বাঁচাতে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেলে কালিয়াকৈর থানায় আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী নারী। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, তাঁরা ৯৯৯ এবং ১০৯-এ ফোন দিলেও পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করতে যায়নি।
বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা তো এটাই প্রথম নয়। এর আগেও এ ধরনের অনেক ঘটনা ঘটেছে। গণমাধ্যমে অনেক ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পর তাত্ক্ষণিক আলোড়নও সৃষ্টি হয়। তারপর তা চলে যায় আড়ালে। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামে ঘরে ঢুকে এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন, ধর্ষণের চেষ্টা ও ভিডিও ধারণ করে স্থানীয় একদল সন্ত্রাসী।
ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে সন্ত্রাসীদের ভয়ে পালিয়ে বেড়ানো ওই নারীকে উদ্ধার করে পুলিশ। বগুড়ায় বাড়ি থেকে ক্যাডার দিয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে এক কিশোরীকে ধর্ষণ করে এক শ্রমিক নেতা। ওই কিশোরী ও তার মাকে মারধর করে মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া হয়।
নারী নির্যাতনের ঘটনা থেমে নেই। মূল্যবোধ নষ্ট হওয়ার প্রভাব পড়ছে সমাজে। দুর্বৃত্তরা সমাজকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে অন্ধকারের দিকে। এ তৎপরতা বন্ধ করতে হবে। কালিয়াকৈরে মা-মেয়েকে নির্যাতনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।