প্রতিবছর ৩০ আগস্ট পালিত হয় গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস। গত ২৯ আগস্ট বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। দেড় দশক ধরেই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গুমের অভিযোগ নিয়ে তীব্র সমালোচনা ছিল দেশে।
জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণ এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানাতে ২০১১ সাল থেকে প্রতিবছর ৩০ আগস্ট আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস পালিত হয়ে আসছে।
দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গুমের অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাপক সমালোচনায় পড়ে। গুম প্রতিরোধ করতে আন্তর্জাতিক কনভেনশন ২০১০ সালে কার্যকর হয়। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে, এত দিন এই কনভেনশনে আমাদের দেশ স্বাক্ষর করেনি।
কাউকে জোরপূর্বক তুলে নেওয়া হলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করা।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ সমাপ্তির পর জাতিসংঘ ১৯৪৮ সালে সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা করে। ১৯৪৮ সালের ঘোষণাপত্রের পর যেসব দেশে মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে, বাংলাদেশ তার অন্যতম। সর্বজনীন ঘোষণাপত্রের ৩ নম্বর অনুচ্ছেদে প্রত্যেকের বাঁচার এবং নিরাপদ থাকার অধিকারের কথা বলা হয়েছে।ঘোষণাপত্রের ২১(ক) (খ) (গ) অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘জনগণের ইচ্ছাই হবে সরকারের ক্ষমতার ভিত্তি।এই ইচ্ছা সর্বজনীন ও সমান ভোটাধিকারের ভিত্তিতে এবং প্রকৃত নির্বাচনের মাধ্যমে ব্যক্ত হবে।’ বলা আছে, ‘প্রত্যক্ষভাবে অথবা অবাধে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে নিজ দেশের সরকারে অংশগ্রহণের অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে। সর্বজনীন ঘোষণাপত্রের ২৯ অনুচ্ছেদে সমাজের প্রতি প্রত্যেকের কর্তব্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে, বলা হয়েছে নিজের অধিকার এমনভাবে ভোগ করতে হবে, যাতে অপরের অধিকার বিঘ্নিত না হয়।বলা হয়েছে গণশৃঙ্খলা ও সর্বসাধারণের কল্যাণের দিকে লক্ষ রাখার এবং আইন মেনে চলার প্রয়োজনীয়তার কথা। আরো বলা হয়েছে, অধিকার ভোগ করার সময় কোনোক্রমেই জাতিসংঘের উদ্দেশ্য ও মূলনীতি লঙ্ঘন করা চলবে না। ’ কিন্তু একটি মহল ২৯ অনুচ্ছেদে লিপিবদ্ধ করা বিধানগুলোসহ আরো অনেক নির্দেশনা ভঙ্গ করেছে।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক কনভেনশন রাষ্ট্রের ওপর কতগুলো শর্ত আরোপ করে। রাষ্ট্র কাউকে জোরপূর্বক গুম করতে পারবে না। এটাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে দেখা হবে। এই গুম সংস্কৃতি থেকে প্রতিটি রাষ্ট্রকে বিরত থাকতে হবে। এ ছাড়া কোনো ব্যক্তি যদি নিখোঁজ থাকেন, তখন তাঁর ব্যাপারে তদন্ত করতে হবে। তাঁর পরিবারকে ন্যায্য বিচার এবং ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কাউকে গুম করা শুধু ন্যায়বিচার পরিপন্থী নয়, সংবিধান পরিপন্থী।হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীকে সভাপতি করে আওয়ামী লীগ শাসনামলে বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হাতে আটকের পর গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানে তদন্ত কমিশন গঠন করেছে সরকার। কমিশন এই গুমগুলোর কারণ নির্ধারণের পর যে সুপারিশ করবে, সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে গুম বন্ধ করার জন্য যে সুপারিশ আসবে, রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যদি সেই সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হয়, তবে বড় ধরনের অগ্রগতি সম্ভব হবে বলে আমরা মনে করি।সরকার আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর করেছে, এটা খুবই একটা ভালো দিক। এটা গুম নিয়ন্ত্রণে একটা বড় ভূমিকা রাখবে।আমরা মনে করি, জাতিসংঘের গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর বাংলাদেশের জন্য একটা মাইলফলক পদক্ষেপ।