দেশে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে গুরুত্বপূর্ণ সব পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা। প্রশ্নপত্র ফাঁস এ দেশে প্রায় নিয়মিত বিষয় বা জাতীয় রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চিকিৎসা শিক্ষাও এই রোগ থেকে মুক্ত নয়। একের পর এক ফাঁস হচ্ছে মেডিক্যাল ও ডেন্টাল মেডিক্যাল কলেজের প্রশ্নপত্র।
কয়েক বছর ধরেই মেডিক্যালের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠছে। এক শ্রেণির অভিভাবক যেকোনো উপায়ে সন্তানদের মেডিক্যাল কলেজে পড়াতে চান। তাঁরা লাখ লাখ টাকা খরচ করে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র কিনে সন্তানদের হাতে তুলে দেন। সন্তানকে চিকিৎসক বানাতে গিয়ে তাঁরা আরো অনেক অবৈধ উপায় অবলম্বন করেন।এভাবে দেশজুড়ে ছড়াচ্ছে মানহীন চিকিৎসকের সংখ্যা। অনিবার্য ফল এই যে দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার ওপর মানুষ ক্রমেই আস্থা হারাচ্ছে।মেডিক্যাল শিক্ষায় ভর্তিতেই যদি গলদ থাকে, প্রশ্ন ফাঁস হয়, তাহলে সেই শিক্ষা ভালো হওয়ার নিশ্চয়তা থাকে না। যেসব শিক্ষার্থীর অভিভাবকের বিপুল অর্থ আছে, তাঁরা লাখ লাখ টাকা খরচ করে প্রশ্ন কিনে সন্তানকে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করাবেন আর মেধাবী শিক্ষার্থীরা ভর্তিযুদ্ধে হেরে যায়।এমনটা কখনোই কাম্য হতে পারে না। কারণ এই পেশা মানুষের জীবন-মরণের সঙ্গে সম্পর্কিত। এই পেশায় শিক্ষা নিয়ে অবহেলা ও উদাসীনতার ফল কতটা মারাত্মক হতে পারে, তা সহজেই অনুমান করা যায়।উপযুক্ত শিক্ষা ও যথার্থ জ্ঞান অর্জন ছাড়াই যদি কারো হাতে চিকিৎসকের সনদ তুলে দেওয়া হয়, তাহলে সেই চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রে রোগীর ভালোর চেয়ে মন্দ হওয়ার আশঙ্কাই বেশি থাকে। সম্প্রতি এই প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, গত সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত সন্দেহে পাঁচ চিকিৎসক এবং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের সবাই মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের কাছ থেকে চক্রের অন্য সদস্য ও অসাধু উপায়ে বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হওয়া অসংখ্য শিক্ষার্থীর নাম পাওয়া গেছে। চিকিৎসাসেবাকে বলা হয় মহৎ পেশা। কারণ এই পেশায় আর্তমানবতার সেবা করা হয়। তাই পেশায় প্রবেশের আগে চিকিৎসকদের শপথও নিতে হয়। কিন্তু অসৎ উপায়ে সনদ অর্জনকারীদের কাছে এই শপথের কি কোনো মূল্য আছে? এই বিধ্বংসী অপরাধ প্রতিরোধের সহজ উপায় হচ্ছে অপরাধীদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করা।