কয়েক বছর ধরেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে। সরকারি প্রেসের কর্মী থেকে শুরু করে অনেকেই এই চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি দুরারোগ্য ব্যাধির মতো জেঁকে বসেছে। কোনোভাবেই এর হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না।
এর আগে মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত নার্সিং কলেজগুলোর বিএসসি ইন নার্সিং (পোস্ট বেসিক) পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে একটি নার্সিং কলেজের সাবেক অধ্যক্ষসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
র্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, নার্সিং কলেজের সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন শিক্ষক এবং প্রশ্নপত্র প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে এই চক্র গড়ে তোলেন মহাখালীর একটি নার্সিং কলেজের এক প্রশিক্ষক। এই চক্র গত পাঁচ বছরে নার্সিং পরীক্ষার একাধিক প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছে। পরীক্ষার্থীদের কাছে ১৫ হাজার টাকায় প্রশ্নপত্র বিক্রি করা হতো। অভিযুক্তরা নার্সিং কলেজগুলোর বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন কমিটি, মডারেটর ও ডিন থেকে নির্বাচিত প্রশ্নপত্র প্রিন্টিং ও প্যাকিংয়ে নিযুক্ত গোপন টিমের সদস্য ছিলেন। এ কারণে সহজেই প্রশ্ন ফাঁস করতেন তাঁরা।
চিকিৎসাসেবাকে বলা হয় মহৎ পেশা। কারণ এই পেশায় আর্তমানবতার সেবা করা হয়। পেশা হিসেবে নার্সিংসেবাও যেকোনো দেশের স্বাস্থ্য খ্যাতের অন্যতম অনুষঙ্গ। সংক্রামক, অসংক্রামক ব্যাধির বিরুদ্ধে, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে দীর্ঘস্থায়ী সব রোগের ব্যবস্থাপনায় হাসপাতাল, কমিউনিটিতে অসুস্থ মানুষকে সেবা-শুশ্রূষা দিচ্ছেন নার্সরা।
রোগীর সবচেয়ে কাছে থেকে সেবার হাত বাড়িয়ে দেন একজন নার্স। হাসপাতাল বা কোনো সেবা প্রতিষ্ঠানে সবাই নিশ্চিন্তে থাকেন নার্সের হাতে সেবার দায়িত্বটি তুলে দিয়ে। রোগীর পর্যবেক্ষণ, সেবা প্রদান, সমস্যা নিরূপণ, শ্রেণিবিন্যাস, পরিকল্পনা, প্রয়োজনীয়তা, মূল্যায়ন, ওষুধপথ্য দেওয়াসহ যাবতীয় দায়িত্ব পালন করেন নার্সরা।
যে শিক্ষার ওপর ভিত্তি করে একজন নার্স নিজেকে প্রশিক্ষিত করে তৈরি করবেন, সেই শিক্ষায়ই যদি গলদ থেকে যায়, তাহলে কী হবে। ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র কিনে যাঁরা নিজেদের নার্স হিসেবে তৈরি করেছেন, তাঁদের কাছ থেকে কি কাঙ্ক্ষিত সেবা পাওয়া যাবে? চিকিৎসাশিক্ষাও প্রশ্নপত্র ফাঁস রোগ থেকে মুক্ত থাকবে না?
নার্সিং পরীক্ষার একাধিক প্রশ্নপত্র ফাঁস করার অভিযোগ তদন্ত করে দেখে অবিলম্বে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।