English

23 C
Dhaka
রবিবার, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪
- Advertisement -

উপকূলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি: সঠিকভাবে বেড়িবাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নিন

- Advertisements -

বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল যে ক্রমেই বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে, আবারও তা জানান দিয়ে গেল ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট এই ঘূর্ণিঝড়টি গত বুধবার ভারতের ওড়িশা উপকূলে আছড়ে পড়ে। আর তাতে বাংলাদেশের উপকূলীয় ৯টি জেলার ২৭টি উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পাঁচ-ছয় ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস হয়। বেড়িবাঁধ ভেঙে তলিয়ে যায় বিস্তীর্ণ এলাকা। সাতজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। শত শত ঘরবাড়ি ও গাছপালা ভেঙে পড়েছে। এসব এলাকার প্রায় সব মাছের ঘের ডুবে মাছ ভেসে গেছে। হাজার হাজার একর কৃষিজমি সাগরের নোনা পানিতে তলিয়ে গেছে। খাবার পানির সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, কয়েক হাজার কোটি টাকার  ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

অতীতে পাঁচ বা ১০ বছর পর পর একটি ঘূর্ণিঝড় হতো। এখন প্রতিবছরই এক বা একাধিক ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে। সিডর-আইলার পর একে একে আঘাত হেনেছে রোয়ানু, মহাসেন, ফণী, আম্ফান, ইয়াসসহ আরো কয়েকটি ঘূর্ণিঝড়। বিজ্ঞানীরা এমন ধারণাই দিয়ে আসছিলেন যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের পরিমাণ যেমন বাড়বে, তেমনি বাড়বে তীব্রতা। আর বাংলাদেশ হবে সেসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়াবহ শিকার। সেসব ভবিষ্যদ্বাণী কতটা সত্য তা ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে।

ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাসেরও প্রয়োজন হয় না। অমাবস্যা বা পূর্ণিমায় একটু অস্বাভাবিক জোয়ার হলেই অনেক এলাকা তলিয়ে যায়। এমন পরিস্থিতির আশঙ্কা করেছিলেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরাও। ১৯৯২ সালে সরকারিভাবে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি উপকূলজুড়ে আরো উঁচু, প্রশস্ত ও টেকসই বাঁধ নির্মাণের পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো সরকারই এ পর্যন্ত তেমন বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়নি। পরিবর্তে পাকিস্তান আমলে তৈরি বেড়িবাঁধ সংস্কারে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়, তা কোনো কাজেই আসছে না।

ষাটের দশকে জোয়ারের পানি ঠেকাতে যখন এ বাঁধ নির্মাণ করা হয়, তখন সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা অনেক কম ছিল। তদুপরি দীর্ঘদিনে এগুলো ভেঙে বা ফাটল ধরে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। এখন এ বাঁধের কার্যকারিতা নেই বললেই চলে। বাঁধ সংস্কারের উদ্যোগগুলো সঠিকভাবে সম্পন্ন হয় না বলেও অভিযোগ রয়েছে।

সঠিকভাবে বাঁধ নির্মাণ করা হলে তা যে স্থানীয় মানুষকে রক্ষা করে শরণখোলার সাউথখালী ইউনিয়নের গাবতলা থেকে বগি পর্যন্ত বেড়িবাঁধটি তার প্রমাণ। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে তৈরি বাঁধটিতে জলোচ্ছ্বাস কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। অথচ অনেক এলাকায় হাজার হাজার মানুষ রাতভর চেষ্টা করেও বাঁধ রক্ষা করতে পারেনি।

গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স ২০১০ অনুযায়ী ১৯৯০ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ১৮ বছরে বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ১.৭ ট্রিলিয়ন ডলার, যা এই সময়ের উন্নয়ন বাজেটের চেয়ে অনেক গুণ বেশি। তার একটি ক্ষুদ্র অংশ দিয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশকৃত উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা যেত। এখনো যদি উপযুক্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া না হয়, তাহলে আরো কয়েক গুণ ক্ষয়ক্ষতির মোকাবেলা আমাদের করতে হবে। তেমনটি কোনোভাবেই কাম্য নয়।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন