বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ক্রমেই বেশি করে দৃশ্যমান হচ্ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। উপকূলীয় অনেক দেশের নিম্নাঞ্চল সমুদ্রের পানিতে তলিয়ে গেছে। বাংলাদেশের উপকূলীয় নিম্নাঞ্চলের অবস্থাও ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে।
মিঠা পানির মাছ কমে যাচ্ছে। বদলে যাচ্ছে ফসল ও উদ্ভিদের ধরন। এমন পরিস্থিতিতে বিস্তীর্ণ উপকূলীয় অঞ্চলের অনেক মানুষ উদ্বাস্তু জীবন বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে। পর্যাপ্ত উদ্যোগ নেওয়া না হলে উপকূলীয় জনজীবনে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে এবং প্রতিবছর ব্যাপকসংখ্যক মানুষ উদ্বাস্তু জীবন বেছে নিতে বাধ্য হবে। তাই নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে উপকূলীয় এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য বাজেটে বরাদ্দের পরিমাণ অন্ততপক্ষে জিডিপির ২ শতাংশ করার দাবি জানানো হয়েছে। রবিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘জাতীয় বাজেট ২০২২-২৩ : টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত জলবায়ু অর্থায়নের প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক সেমিনারে তাঁরা এই সুপারিশ করেন।
বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কতটা ভয়াবহ হতে পারে এরই মধ্যে তার কিছু ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক গবেষণায়। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েটের একটি দীর্ঘ গবেষণার ফল প্রকাশিত হয় ২০১৬ সালে। তাতে দেখা যায়, ২০৫০ সাল নাগাদ বঙ্গোপসাগরের সুন্দরবন অংশে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে ০.৫ মিটার। এতে সুন্দরবনের ৪২ শতাংশ এলাকা ডুবে যাবে। উপকূলীয় ১৯ জেলায় দুই হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা ডুবে যাবে এবং প্রায় ২৫ লাখ মানুষ বাস্তুহারা হবে।
চার বছর মেয়াদি এই গবেষণায় স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ের পানি, তাপমাত্রা ও অন্যান্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হয়েছে। গবেষণায় যুক্ত ছিল যুক্তরাজ্যের একসেটার বিশ্ববিদ্যালয়, নেদারল্যান্ডসের ফ্রি ইউনিভার্সিটি, ওয়ার্ল্ড ফুড প্রগ্রাম, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিসহ ১৬টি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা।
একই ধরনের পূর্বাভাস পাওয়া যায় বিশ্বব্যাংকের আরেক গবেষণা প্রতিবেদনে। ২০১৯ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের তিন-চতুর্থাংশ বা প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি মানুষের জীবনযাত্রার মান অনেক নিচে নেমে যাবে। বাংলাদেশের বিজ্ঞানী-অর্থনীতিবিদরাও অনেক দিন ধরেই এমন আশঙ্কার কথা বলে আসছেন।
২০৫০ সাল খুব একটা দূরে নয়, আর মাত্র ২৮ বছর বাকি। আর এ ক্ষয়ক্ষতি ২০৫০ সালে গিয়েই হবে, তাও নয়। ক্ষতি এখনো হচ্ছে। প্রতিবছরই বাড়ছে ক্ষতির পরিমাণ। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকার এর মধ্যে ডেল্টা বা ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।
পরিকল্পনাটি দেশে ও বিদেশে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। এখন এই পরিকল্পনার সঙ্গে সমন্বয় করে উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য বিশেষ উন্নয়ন পরিকল্পনা নেওয়া প্রয়োজন। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ চাষাবাদ প্রবর্তনের লক্ষ্যে গবেষণা দ্রুততর করতে হবে। সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জন্য পুনর্বাসন প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।