উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে রংপুর, নীলফামারী ও লালমনিরহাটের তিস্তাতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে হঠাৎ করেই নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপত্সীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তারপরই দেখা দেয় এই বন্যা। প্রকাশিত খবরাখবর থেকে জানা যায়, এক সপ্তাহ ধরে ভারতের ১১ জেলায় ভারি বৃষ্টি হয়েছে। পানি ধরে রাখতে না পেরে তিস্তার উজানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে থাকা গজলডোবা ব্যারাজের সব গেট একসঙ্গে খুলে দেওয়া হয়। আর তাতেই বাংলাদেশের তিন জেলায় আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি হয়। এতে নদীতীরবর্তী হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে।
এসব এলাকার রোপা আমন, বাদাম, পাটসহ বিভিন্ন ফসল পানিতে ডুবে যায়। শত শত পুকুরের মাছ ভেসে যায়। ঘরে পানি ওঠায় মানুষ রান্না করতে পারছে না। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। বহু মানুষ গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে উঁচু এলাকায় খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছে। শুক্রবার পানি কিছুটা কমলেও মানুষের দুর্ভোগ খুব একটা কমেনি। এই অবস্থায় শুক্রবার আবহাওয়াবিদরা বলেছেন, দুই দিনের মধ্যে বাংলাদেশে আবার বৃষ্টিপাত শুরু হতে পারে।
অন্যদিকে মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। ফলে উজানে ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। এই অবস্থায় আবারও দীর্ঘস্থায়ী বন্যার সৃষ্টি হতে পারে।
দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, বাংলাদেশে অন্য সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে মোট যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়, কেবল বন্যায় তার চেয়ে কয়েক গুণ ক্ষয়ক্ষতি হয়। এর একটি বড় কারণ নদীগুলো ভরাট হয়ে যাওয়া এবং উজানে নদীগুলোর অস্বাভাবিক ব্যবহার। শুষ্ক মৌসুমে উজান থেকে নদীগুলোতে পানি প্রায় আসেই না।
পানির প্রবাহ না থাকায় নদীগুলোর ভরাট প্রক্রিয়া দ্রুততর হয়। বর্ষায় উজানের সব বাঁধ খুলে দেওয়ায় একসঙ্গে এত পানি নেমে আসে যে আমাদের নদীগুলো তা ধারণ করতে পারে না।
শুরু হয় আকস্মিক বন্যা। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের কথা আমাদের ভাবতেই হবে। পশ্চিমবঙ্গে থাকা গজলডোবার সব গেট একসঙ্গে খুলে দিলেই বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষকে বন্যার পানিতে ভাসতে হবে, তা হতে পারে না। নদীগুলোকে নাব্য করতে হবে। শুষ্ক মৌসুমে তিস্তার পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। উজানে পানির অস্বাভাবিক ব্যবহার বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে হবে।