অবৈধভাবে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমাতে গিয়ে অতীতে অনেক বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটছে। নৌকাডুবি হয়ে বহু মানুষের প্রাণ গেছে। মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের জলসীমায় অনেক নৌকায় গুলি চালানো হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়ে সেসব দেশের জেলখানায় স্থান হয়েছে বহুজনের।
অনেকে গহিন জঙ্গলে আফিম চাষের জন্য ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি হয়েছে বলেও জানা যায়। অনেককে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনাও ঘটছে। ঝুঁকিপূর্ণ পথ পাড়ি দিয়ে মালয়েশিয়া যেতে পারলেও সেখানেও পড়তে হতো নানা বিড়ম্বনায়। অবৈধ অভিবাসী হিসেবে পালিয়ে বেড়াতে হতো। গভীর জঙ্গলে আশ্রয় জুটলেও অত্যন্ত মানবেতর জীবন কাটাতে হতো। আর ধরা পড়লে যেতে হতো কারাগারে। দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা দালালচক্র নানা মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে, নানাভাবে ফুসলে এই সর্বনাশা পথে নিয়ে যেত।
১৯৮৯ সাল থেকে নিয়মিতভাবে আমাদের কর্মীরা মালয়েশিয়ায় কাজ নিয়ে যাচ্ছেন। কর্মীদের শোষণ ও প্রতারণার কারণে ১৯৯৬ সালের জুলাই মাসে মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে বাধ্য হয়। চার বছর পর ২০০০ সালে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলেও এক বছরের মধ্যেই নিয়োগপ্রক্রিয়া আবার নিষেধাজ্ঞায় পড়ে। যদিও ২০০৩ সালের জুলাই মাসে ওই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছিল, তবে নানা অভিযোগে ২০০৯ সালের মার্চ মাসে আবার স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। ২০১২ সালের ২৬ নভেম্বর ‘জিটুজি’ পদ্ধতিতে কর্মী নিয়োগসংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকটি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ শুরু করে।
সরকারের ঐকান্তিক চেষ্টায় বাংলাদেশ থেকে এখন মালয়েশিয়ায় কর্মী রপ্তানি হচ্ছে সরকারিভাবে, যা অত্যন্ত নিরাপদ। সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড, বোয়েসেলের মাধ্যমে সরকারিভাবে মালয়েশিয়ায় কর্মী যাওয়া শুরু হয়েছে। গত মঙ্গলবার সকালে ৩০ জন কর্মী কুয়ালালামপুর গেছেন। এক হাজার কর্মীর চাহিদা থাকলেও পরীক্ষামূলকভাবে তিন দফায় ৩০ জন করে ৯০ কর্মী মালয়েশিয়ায় যাবেন। এসব কর্মীকে প্লানটেশন সেক্টরে কাজের উদ্দেশ্যে পাঠানো হচ্ছে।
মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর পাশাপাশি অন্যান্য দেশেও কর্মী অধিক হারে পাঠানোর উদ্যোগ নিতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বন্ধ হয়ে যাওয়া বাজার নতুন করে চালু করার ব্যবস্থা নিলে দেশের জনশক্তি রপ্তানিতে অচিরেই জোয়ার আসবে বলে ধারণা করা যায়। অদক্ষ, আধাদক্ষ কর্মীর পাশাপাশি দক্ষ জনশক্তির বাজার খুঁজে বের করতে পারলে রেমিট্যান্স বাড়বে। গতি পাবে অর্থনীতির চাকা।