বীর মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। জীবন বাজি রেখে তাঁরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধ করতে করতে অনেকে প্রাণ দিয়েছেন। অনেকে আহত হয়েছেন। পঙ্গু জীবনযাপন করছেন। তাঁদের সেই ত্যাগের বিনিময়েই আজ আমরা স্বাধীন দেশের বাসিন্দা। স্বাধীনতা উপভোগ করছি। আমরা কি সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উপযুক্ত মূল্যায়ন করতে পেরেছি! অত্যন্ত দুঃখজনক যে স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা করতে পারিনি। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, সর্বশেষ ২০১৩ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের নির্ভুল ও পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির যে কাজ শুরু হয়েছিল, ১০ বছরেও তা সম্পন্ন করা যায়নি। কবে সম্পন্ন হবে, তা-ও নিশ্চিত নয়। এত দিনেও তালিকা চূড়ান্ত করতে না পারাকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক নিজেও একটি বড় ব্যর্থতা বলে মনে করেন।
স্বাধীনতার পর থেকে অনেকবার মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পঁচাত্তরের পর মুক্তিযোদ্ধারা চরম অপাঙক্তেয় ছিলেন। তখনো তালিকা করা হয়েছে। তালিকা করা হয়েছে এরশাদ সরকারের আমলেও। প্রতিবারই বহু অমুক্তিযোদ্ধা, এমনকি রাজাকারকেও মুক্তিযোদ্ধা বানানোর অভিযোগ উঠেছে। এমনকি উপজেলা সমাজকল্যাণ দপ্তরেও মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা কাটাছেঁড়া করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করা জরুরি হয়ে পড়ে। ২০১৩ সালে সেই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়, কিন্তু ১০ বছরেও সেই তালিকা চূড়ান্ত করতে না পারা অবশ্যই একটি বড় ব্যর্থতা।
বেশির ভাগ মুক্তিযোদ্ধার বয়স এখন ৭০ বছরের বেশি। অনেকেই অসুস্থ। অনেকেই চলাচলে অক্ষম। তালিকা তৈরির নামে তাঁদের জেলা বা উপজেলায় ডেকে নেওয়া, অবান্তর প্রশ্নের মুখোমুখি করা সম্মানজনক তো নয়ই, বাস্তবসম্মতও নয়।
প্রকৃত অনেক মুক্তিযোদ্ধাই এমন ডাকে সাড়া দেবেন না কিংবা দিতে পারবেন না। তাহলে তাঁরা কি তালিকার বাইরে থাকবেন? অভিযোগ আছে, অতীতে অনেক মুক্তিযোদ্ধা এসব কর্মকাণ্ডে অসম্মানজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) কার্যালয়ে কিংবা মন্ত্রণালয়ে গিয়ে তাচ্ছিল্যের শিকার হয়েছেন।
অপমানিত হয়েছেন। মন্ত্রণালয়ে একজন আমলার কাছ থেকে পাওয়া অপমান সইতে না পেরে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা কীটনাশক পানে আত্মহত্যা করেছেন বলেও খবর প্রকাশিত হয়েছে। ভারতে প্রশিক্ষণ পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা আছে। সেনানিবাসেও মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা আছে এবং সেই তালিকা অনুযায়ী স্বাধীনতার পর মুক্তিযোদ্ধাদের এককালীন ভাতাও দেওয়া হয়েছে। সেসবের ভিত্তিতে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরি করা নিশ্চয়ই এতটা কঠিন নয় যে তা ১০ বছরেও সম্পন্ন করা যাবে না।
আমরা চাই মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা দ্রুত জাতির সামনে উপস্থাপন করা হোক। সেই তালিকা বই আকারে সংরক্ষণ করতে হবে। লক্ষ রাখতে হবে, একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাও যেন তালিকা থেকে বাদ না পড়েন কিংবা অসম্মানিত না হন। যেকোনো প্রকারেই হোক, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাপ্য সম্মান নিশ্চিত করতে হবে।