বর্তমানে বিশ্বব্যাপী গুরুতর অসুস্থতা ও মৃত্যুর একটি প্রধান কারণ অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি জীবাণুর প্রতিরোধক্ষমতা। এর কারণ, অনেক অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে জীবাণু ধ্বংস করা যায় না। ফলে রোগ ক্রমেই গুরুতর রূপ ধারণ করে। অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহারসহ আরো অনেক কারণেই জীবাণুরা এই প্রতিরোধক্ষমতা অর্জন করে।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন, আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করার ফলেও শিশুদের দেহে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা কমে যায়। গবেষকরা মনে করছেন, দ্রুত প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের কাছে এখন প্রধান শঙ্কার বিষয় জীবাণুর অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধক্ষমতা। যখন অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কৃত হয়নি, তখন সাধারণ রোগব্যাধিতেও শত শত মানুষের মৃত্যু হতো। গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হয়ে যেত।
বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, জীবাণুরা যেভাবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হচ্ছে, তাতে জনস্বাস্থ্যের অবস্থা আবারও অ্যান্টিবায়োটিক-পূর্ব সময়ের মতো হয়ে যেতে পারে। কিন্তু পারিবেশিক কারণগুলোর ক্ষেত্রে মানুষ কী করবে? কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানীরা এই গবেষণাটি পরিচালনা করেন চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ ও মতলব উপজেলায়। হাজীগঞ্জের মানুষ প্রধানত অগভীর নলকূপের পানি পান করে।
এখানকার ৫০টি পানির নমুনায় আর্সেনিকের ঘনত্ব ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় ৪৮ গুণ বেশি। অন্যদিকে মতলবের নমুনাগুলোতে আর্সেনিকের মাত্রা স্বাভাবিক ছিল। হাজীগঞ্জের পানিতে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ই. কোলাইয়ের প্রাদুর্ভাব ছিল অনেক বেশি। হাজীগঞ্জের ৯৪ শতাংশ শিশুর দেহে ব্যাকটেরিয়াটির উপস্থিতি পাওয়া যায়, যা মতলবের শিশুদের ক্ষেত্রে ছিল ৭৬ শতাংশ।
হাজীগঞ্জে পাওয়া ব্যাকটেরিয়া পেনিসিলিন, সেফালোস্পোরিন, ক্লোরামফেনিকলসহ একাধিক অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী ছিল। গবেষকরা আশঙ্কা করেছেন, বাংলাদেশে আর্সেনিকযুক্ত এলাকার শিশুদের দেহে এটির উপস্থিতি এবং অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের মধ্যে প্রাপ্ত সম্পর্কটি জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি প্রধান উদ্বেগের বিষয় হতে পারে। গবেষকদের মতে, আর্সেনিকের পাশাপাশি সিসা, পারদ, লোহার মতো অন্যান্য ভারী ধাতুর প্রভাব নিয়েও গবেষণা পরিচালনা করা প্রয়োজন।
দেশে অ্যান্টিবায়োটিকের বহু অপব্যবহার রয়েছে। ওষুধের দোকান থেকে যে কেউ অ্যান্টিবায়োটিক কিনতে পারে। সাধারণ সর্দি-জ্বরেও মানুষ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে থাকে এবং কোর্স সম্পন্ন করার ধার ধারে না।
অতি ব্যবহার ও অপব্যবহার দুটিই জীবাণুকে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী করে তুলছে। এ ছাড়া হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলকেও মানুষ প্রয়োজনের অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক দিচ্ছে। মাংসের মাধ্যমে তা চলে আসছে মানবদেহে। এসব কারণেও জীবাণুরা ক্রমেই বেশি করে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। বাংলাদেশেও চিকিৎসকরা রোগীদের মধ্যে বেশি করে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীবাণুর উপস্থিতি লক্ষ করছেন।
জীবাণুর অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধক্ষমতা অর্জনের বিষয়টিকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে। জীবাণুর প্রতিরোধক্ষমতা অর্জনের কারণগুলো দূর করতে হবে।
দেশের কোন কোন অঞ্চলে আর্সেনিকযুক্ত পানি পানের পরিমাণ বেশি, তা চিহ্নিত করে সেসব এলাকায় আর্সেনিকমুক্ত পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। আর্সেনিকোসিস থেকেও মানুষকে রক্ষা করতে হবে। পাশাপাশি পরিস্থিতি ভয়াবহ পর্যায়ে যাওয়ার আগেই অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।