২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ১৬তম বার্ষিকী ছিলো গতকাল। এটি ছিল আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে অন্যতম নৃশংস হত্যাকাণ্ড হিসেবে বিবেচিত। ২০০৪ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে জঙ্গিগোষ্ঠী আইভী রহমানসহ ১৮ জনকে হত্যা ও কয়েক শ মানুষকে আহত করে। এ ঘৃণ্য হামলার প্রধান লক্ষ্যবস্তু ছিলেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী) শেখ হাসিনা। তখন বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতায়।
দুর্ভাগ্যজনক যে তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকার প্রকৃত অপরাধীদের না ধরে জজ মিয়া নাটক সাজিয়েছিল। ঘটনার পরপরই আলামত মুছে ফেলা হয়। সরকার গঠিত এক সদস্যের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন এ হামলাকে প্রতিবেশী দেশের গোয়েন্দাদের কাজ বলেও দাবি করেছিল। জোট আমলে গ্রেনেড হামলা মামলার তদন্তকাজ আর এগোয়নি।
২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর তদন্তে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসে। ২০০৮ সালের ১১ জুন হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি অধিকতর তদন্তের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। সিআইডি ২০১১ সালের ৩ জুলাই সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেয়। এতে বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ নতুন করে ৩০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।
দীর্ঘ শুনানির পর ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার আদালত ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, ডিজিএফআই ও এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালকও আছেন। এ ছাড়া আদালত ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন, যাঁদের মধ্যে আছেন তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, সাবেক সাংসদ শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ প্রমুখ। যাবজ্জীবন দণ্ড পাওয়া ১৯ আসামির মধ্যে ১৩ জনই পলাতক। মৃত্যুদণ্ড পাওয়া তিন আসামি আগেই অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড পেয়েছেন।
মামলার নথিপত্র ও সাক্ষ্যে বেরিয়ে এসেছে, এ হামলায় জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্যরা অংশ নিলেও ক্ষমতাসীনদের একাংশ, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত সংস্থার শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদেরও প্ররোচনা ছিল। ঘটনার পর মাওলানা তাজউদ্দিন নামে এক জঙ্গিকে ভিন্ন নামে পাসপোর্ট দিয়ে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
বিচারিক আদালত ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার রায় দিয়েছেন। এখন উচ্চ আদালতে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, বিচারিক আদালতের রায় বিষয়ে আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানি উচ্চ আদালতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব আপিল নিষ্পত্তি ও অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত হোক—এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা। একই সঙ্গে দণ্ডিত পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের মতো ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাও অতি ঘৃণ্য ও বর্বরোচিত ঘটনা। এ ঘটনা জাতীয় রাজনীতিতে অনতিক্রম্য সন্দেহ ও অবিশ্বাসের জন্ম দিয়েছে। রাজনীতিতে সমঝোতার পথকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তৎকালীন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল হিসেবে এ ঘটনার বিচার করতে না পারা এবং ঘটনার সঙ্গে দলের লোকজনের সংশ্লিষ্টতার কারণে বিএনপিকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার দায় নিতেই হবে। মামলার রায়ে বিএনপির যেসব নেতা দণ্ডিত হয়েছেন, তঁাদের দলে রেখে হামলার দায় এড়ানোর কোনো সুযোগ আছে বলে আমরা মনে করি না।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন