অপরাধ প্রমাণিত হলে জেল-জরিমানা হওয়ার কথা। কিন্তু কক্সবাজারের চকরিয়ার একটি আদালত প্রতারণা মামলায় সুলতান আহমেদ নামের এক ব্যক্তিকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়ে সেই সাজা স্থগিত করেছেন। তার বদলে আসামিকে মুক্তিযুদ্ধের বই পড়তে, এতিমদের খাওয়াতে ও গাছ লাগাতে এবং মাদক থেকে দূরে থাকাসহ সব ধরনের অপরাধ এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে। তাঁকে বাড়িতে থেকেই ১২ দফা শর্ত পালনের আদেশ দেওয়া হয়েছে। এসব দেখভালের জন্য একজন প্রবেশন কর্মকর্তা থাকবেন, তিনি প্রতি তিন মাস পর আদালতে প্রতিবেদন জমা দেবেন।
প্রতিবেদন সন্তোষজনক না হলে আসামিকে কারাগারে যেতে হবে।সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ৯ বছর আগে ভিসা বিক্রির প্রতারণা মামলায় আসামি সুলতান আহমদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন একই এলাকার তৌহিদুল ইসলাম। কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজিব কুমার দেব এ রায় দেন। গত মার্চ মাসেও মাগুরার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াউর রহমান এক রায়ে কারাবাসের বদলে এক তরুণ আসামিকে বই পড়তে, সিনেমা দেখতে ও গাছ লাগাতে বলেছিলেন। একটি সহিংসতার মামলায় দোষী প্রমাণিত হলেও তাঁকে সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হয়। মামলার পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেছিলেন, ক্ষণিকের উত্তেজনায় করা এ অপরাধে তরুণ আসামি ইব্রাহিমকে শাস্তিভোগের জন্য কারাগারে পাঠালে সংশোধন হওয়ার বদলে অপরাধী হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। দণ্ডের উদ্দেশ্য প্রতিশোধ নয়; বরং সংশোধন হওয়ার পথ করে দিয়ে সমাজে ও রাষ্ট্রে একজন সুনাগরিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার সুযোগ দেওয়া।
দেশের কারাগারগুলো সংশোধনাগার ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে ওঠার কথা। বাংলাদেশ কারা বিভাগের স্লোগান, ‘রাখিব নিরাপদ, দেখাব আলোর পথ’। কিন্তু কারাগারের ব্যবস্থাপনা ও মান নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে, কারাগারকেন্দ্রিক অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রায় অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। কারা বিভাগের সিটিজেন চার্টার দেখলেই বোঝা যায়, আসামিদের জন্য বেশির ভাগ প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার শুধুই কথার কথা।
তাই ক্ষেত্রবিশেষে এ ধরনের রায় সমর্থনযোগ্য। দেশের কারাগারগুলোতে ধারণক্ষমতার দুই থেকে তিন গুণ আসামি অবস্থান করছেন। কিন্তু কারাগারে থাকলেই যে অপরাধী ভালো হয়ে যাবেন, এমন নয়। তাই বিশেষ কিছু ঘটনার ক্ষেত্রে সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে দণ্ডিত ব্যক্তিদের কারাগারের বাইরে রেখেও শোধরানোর সুযোগ দেওয়া, এবং সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার মঙ্গলকর হতে পারে।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন