শীত আসছে। প্রতিবছরই শীতের সঙ্গে সঙ্গে আসে শীতজনিত রোগ। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, ঠাণ্ডাজনিত ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ নানা রোগ ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ে। তখন অনেক জায়গায় হাসপাতালের মেঝেতেও রোগীদের স্থান সংকুলান হয় না।
ঠাণ্ডা থেকে সাধারণ জ্বর-সর্দি-কাশি ছাপিয়ে বাড়তে থাকে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, অ্যাজমাসহ নানা ধরনের শ্বাসতন্ত্রের রোগ। শীতে হৃদরোগীদের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। হৃদরোগীর ক্ষেত্রে বেশি ঠাণ্ডা অনেক সময় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এর সঙ্গে যুক্ত হয় নতুন আরো কিছু রোগ। সঙ্গে মৌসুমি রোগের ভোগান্তি। রাজধানীসহ জেলা-উপজেলা হাসপাতালগুলোতে বেড়ে যায় রোগীর সংখ্যা। অন্য বয়সীদের তুলনায় বেশি বিপদে পড়তে হয় বৃদ্ধ ও শিশুদের। বিশেষজ্ঞরা বলেন, হঠাৎ শীত বেড়ে গেলে বিভিন্ন ধরনের জীবাণু সহজে মানুষকে কাবু করে ফেলে। এ ক্ষেত্রে সর্দি, ডায়রিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ব্রংকাইটিস, ব্রংকিওলাইটিস, মধ্যকর্ণের প্রদাহ, সাইনাসের প্রদাহ, ক্রুপ, নিউমোনিয়া, চিলব্লেইন্স, ঠোঁট ফেটে যাওয়া, সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিস-অর্ডার ইত্যাদি রোগ বেশি হয়ে থাকে।
প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, শীত আসার আগেই দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে শীতকালীন রোগ দেখা দিয়েছে। এসব রোগে আক্রান্তদের বেশির ভাগই শিশু। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, প্রতি ২৪ ঘণ্টায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ জন রোগী। একই সংখ্যক রোগী আসছে ডায়রিয়া ওয়ার্ডেও। অনেক রোগীকে মেঝেতে থাকতে হচ্ছে। কুড়িগ্রামের হাসপাতালগুলোতে শয্যাসংখ্যার দ্বিগুণ রোগী ভর্তি হচ্ছে। কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি ২৬ জন রোগীর মধ্যে ১৯ জনই শিশু।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতের সময় বরাবরই ঠাণ্ডাজনিত জ্বর, সর্দি, কাশি, হাঁপানি, গিঁটে বাতের ব্যথার মতো কিছু রোগ দেখা দেয়। আগে প্রচলিত কিছু ওষুধেই তা ঠিক হয়ে যেত। কিন্তু এখন অনেক রোগের ধরন পাল্টে যাচ্ছে। অনেক উপসর্গেই পরিবর্তন আসছে। আবার আগে যেসব ওষুধে সহজে কাজ হতো, এখন সেগুলোতে কাজ হয় না। কিছু কিছু অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতাও আগের মতো নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ সময়ে এ রোগ থেকে মুক্ত থাকার জন্য ঠাণ্ডা অনুসারে গরম কাপড় ব্যবহার, যতটা সম্ভব ঠাণ্ডা পরিবেশ এড়িয়ে চলা জরুরি।
শীত এলে শীতজনিত রোগে মানুষ আক্রান্ত হবে, এটাই স্বাভাবিক। কাজেই এখন থেকেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সতর্কতা প্রচার করতে হবে। শিশুদের ব্যাপারে অভিভাবকদের অধিকতর সতর্ক থাকা প্রয়োজন। শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্তদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। হাসপাতালগুলোকে পুরোপুরি প্রস্তুত রাখতে হবে।