দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে তিন কিলোমিটারের মধ্যে ও লোকালয় থেকে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা নিষিদ্ধ। কিন্তু বাস্তবে কী দেখা যায়? লোকালয়ের ভেতরে বা বাড়িঘরের পাশেই ইটভাটা। বনের সীমানারেখার পাশে, এমনকি বনের জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে ইটভাটা। আর প্রায় শতভাগ ইটভাটায়ই পোড়ানো হচ্ছে জ্বালানি কাঠ।
তাহলে এমন আইন থেকে লাভ কী? পরিবেশ অধিদপ্তর ও অন্যান্য প্রশাসন রয়েছে এসব দেখার জন্য বা আইন বাস্তবায়নের জন্য। তাদের পেছনে রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। এই ব্যয়ের তাৎপর্য কোথায়? গতকাল প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায় ৪৭টি ভাটায় ইট পোড়ানোর আয়োজন চলছে। অনেক ভাটায়ই বন থেকে কাঠ কেটে এনে স্তূপ করা হচ্ছে।
কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের প্রায় সব উপজেলায়ই এ রকম অনেক ইটভাটা দেখা যায়, যেগুলো আইন-কানুনের কোনো ধার ধারে না। শুধু চট্টগ্রামই নয়, কমবেশি সারা দেশেই একইভাবে ইটভাটাগুলো পরিচালিত হতে দেখা যায়। আগের মৌসুমে প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, মাদারীপুর ও রাজবাড়ী জেলার প্রায় শতভাগ ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো হয়। প্রায় একই ধরনের খবর আসে অন্যান্য জেলা থেকেও। জানা যায়, গত দুই বছরে কয়লার দাম বেড়ে প্রায় তিন গুণ হয়ে গেছে। এ কারণে কয়লা দিয়ে ইট পোড়ালে খরচ অনেক বেড়ে যায়। যারা কাঠ পোড়ায়, তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পারা যায় না। তাই ইটভাটায়ও কাঠ পোড়ানোর প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশে পরিবেশগত বিপর্যয় নেমে আসবে।
জেলা প্রশাসন ইটভাটাগুলোর লাইসেন্স দেয়। পরিবেশ অধিদপ্তর পরিবেশ ছাড়পত্র দেয়। ইটভাটাগুলো দেশের আইন ও পরিবেশসম্মতভাবে পরিচালিত হয় কি না, তা দেখার দায়িত্বও তাদের। সারা দেশের মানুষ জানে, ইটভাটায় কোনো আইনই মানা হচ্ছে না, কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তা দেখতে পান না কেন? গণমাধ্যমে প্রতিনিয়ত এমন অনেক খবর প্রকাশিত হচ্ছে, তার পরও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তৎপরতা দেখা যায় না কেন?
অভিযোগ আছে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগসাজশ রেখেই এসব বেআইনি কাজ করা হয়। প্রকাশিত খবর থেকেও জানা যায়, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইটভাটা মালিক স্বীকার করেছেন, প্রতি মৌসুমের আগেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তাঁরা ‘ম্যানেজ’ করেন। ফলে অভিযানের আগেই তাঁরা খবর পেয়ে যান এবং জ্বালানি কাঠ সরিয়ে নেন। এই শুভংকরের খেলা আর কত দিন চলবে?
নির্মাণসামগ্রী হিসেবে ইটের অনেক বিকল্প রয়েছে। ইট পোড়ানোরও অনেক উন্নত পদ্ধতি এসেছে। বাংলাদেশেও ইট পোড়াতে গ্যাসের ব্যবহার আছে। প্রয়োজনে তা আরো বাড়াতে হবে। কিন্তু কোনোক্রমেই এভাবে বনাঞ্চল বা বৃক্ষসম্পদ ধ্বংস করা যাবে না। সরকারকে আরো উদ্যোগী হতে হবে।