দেশে শিক্ষার হার বেড়েছে। সব ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণও আশাব্যঞ্জক। পুরুষদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে নারী। শিক্ষায় ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা ভালো করছে।
সারা দুনিয়ায় বাংলাদেশের নারী জাগরণ সাড়া ফেলেছে। কিন্তু বাংলাদেশ পিস অবজারভেটরির (বিপিও) উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের (সিজিএস) করা গবেষণা প্রতিবেদনে যে চিত্র উঠে এসেছে, তা নিতান্তই দুঃখজনক। এই গবেষণা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে প্রকাশিত একটি খবর বলা হয়েছে, দেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে। চলতি বছর আট মাসে দুই হাজার ৩৬৫টি নারী ও কন্যাশিশু নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নারী ও শিশু নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে আগস্ট মাসে।
দেশে যুগোপযোগী করে নারী নির্যাতন দমন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করা হয়েছে। এর পরও নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না কেন? দেশে আইন আছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আছে, এর পরও নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে কেন? তখন তার কারণ খুঁজে বের করা জরুরি।
নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে যাওয়া আমাদের জন্য লজ্জাজনক? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্যাতনের মামলাগুলোর ‘ঠিকমতো বিচার না হওয়ার’ কারণেই নারীরা বেশি সহিংসতার শিকার হচ্ছে। তাঁরা মনে করছেন, কঠোর আইন ধর্ষণ প্রতিরোধে সহায়ক হচ্ছে না। কারণ যারা এ অপরাধ করছে, তারা ধর্ষণকে অপরাধ বলেই মনে করে না। সচেতনতা বাড়ালে এবং শাস্তি কার্যকর করা গেলে এর প্রভাব পড়বে। তাঁদের মতে, নির্যাতন কমাতে হলে সত্যিকার অর্থে আইনের কঠোর প্রয়োগ হতে হবে। যেসব মামলা হচ্ছে তার দ্রুত বিচার হতে হবে।
বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়িয়ে তুলছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে সামাজিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে বলেও মনে করেন তাঁরা।
আমরা মনে করি, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে। সমাজপতিদের এগিয়ে আসতে হবে। বাড়াতে হবে নাগরিক সচেতনতা। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী আরো তৎপর হবে, সামাজিক সংগঠনগুলো সম্মিলিতভাবে কাজ করবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।