২০২৩ সালে প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, শিশুশ্রমিক বেড়েছে সাড়ে ৮৬ হাজার। দেশে এখন ৩৫ লাখ ৩৬ হাজার ৯২৭ জন শিশুশ্রমিক আছে।
বর্তমানে ১০ লাখ ৭০ হাজার শিশুশ্রমিক ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে। তবে ১০ বছরের ব্যবধানে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুশ্রমিকের সংখ্যা দুই লাখের মতো কমেছে। আগে ছিল সাড়ে ১২ লাখের বেশি।
সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ৪৩টি খাতকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে বিবিএস সরকারঘোষিত এই ঝুঁকিপূর্ণ তালিকা থেকে খাতভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শিশুশ্রম জরিপ ২০২৩ পরিচালনার জন্য পাঁচটি খাত নির্বাচন করে। জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, বিবিএসের নির্বাচিত উল্লিখিত পাঁচটি সেক্টরে ৪০ হাজার ৫২৫টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কালের কণ্ঠে গতকাল প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, রাজধানীতে শিশুশ্রমিকের ৯০ শতাংশ ওয়েল্ডিং যন্ত্র, গ্যাস বার্নারসহ অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ সরঞ্জাম নিয়ে কাজ করছে। এ ছাড়া মোটরসাইকেল গ্যারেজ, লেগুনা, নির্মাণ খাত, বাসচালকের সহকারীসহ বিভিন্ন কাজ করছে শিশুরা।
বিদ্যমান আইন ও নীতিমালার যথাযথ বাস্তবায়নের অভাব শিশুশ্রম নিরসনের প্রধান বাধা বলে মনে করেন শিশু বিশেষজ্ঞরা।
তাঁদের মতে, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক দুরবস্থাও শিশুশ্রমের অন্যতম কারণ। গ্রামে কাজের অপ্রতুল সুযোগ, সামাজিক অনিশ্চয়তা, মৌলিক চাহিদা পূরণের অভাব ইত্যাদি কারণে গ্রাম থেকে মানুষ শহরমুখী হচ্ছে। নদীভাঙন, বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস ও ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটছে। এজাতীয় প্রতিটি ঘটনা-দুর্ঘটনাই শিশুদের কায়িক শ্রমের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মা-বাবার স্বল্প শিক্ষা, দারিদ্র্য ও অসচেতনতার কারণে তারা শিক্ষাকে একটি অলাভজনক কর্মকাণ্ড মনে করে। এ ছাড়া শিশুশ্রমের কুফল সম্পর্কে অভিভাবকদের অসচেতনতা রয়েছে।
সরকার ও অংশীজনদের চেষ্টা সত্ত্বেও বাংলাদেশে শিশুশ্রম বন্ধ করা যাচ্ছে না। এর একটি বড় কারণ দারিদ্র্য।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুশ্রম নিরসনে আইন সংস্কার ও তার সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। শিশুদের শ্রম থেকে প্রত্যাহারের লক্ষ্যে তাদের মা-বাবার জন্য আয় বৃদ্ধিমূলক কাজের ব্যবস্থা করতে হবে। শিশুদের অধিকার সংরক্ষণ, শিশুশিক্ষা নিশ্চিত করা এবং শিশুশ্রম নিরসন করার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।