সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আমাদের সমাজজীবনকে কতভাবে যে ক্ষতিগ্রস্ত করছে তার কোনো হিসাব নেই। এত দিন নানা অপরাধের কথা শোনা গেলেও ফেসবুকে লোভ দেখিয়ে কিডনি বিক্রির মতো যে খবরটি গণমাধ্যমে এসেছে, তা উদ্বেগজনক। ফেসবুকের মাধ্যমে কিডনি বেচাকেনায় জড়িত থাকার অভিযোগে একটি চক্রের পাঁচ সদস্য র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে।
প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে, গত সোমবার মধ্যরাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত রাজধানীর নর্দ্দা ও জয়পুরহাট জেলায় অভিযান চালিয়ে এই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, অর্থের লোভ দেখিয়ে চক্রটি হতদরিদ্র লোকদের কিডনি সংগ্রহ করে বিত্তশালী রোগীদের কাছে বিক্রি করত। তারা কিডনিদাতা ও গ্রহীতাকে ভারতে নিয়ে কিডনি সংগ্রহ ও প্রতিস্থাপনের কাজ সম্পন্ন করত। র্যাবের অভিযোগ, একজন কিডনিগ্রহীতার কাছ থেকে ১৫ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা নিলেও তারা কিডনিদাতাকে প্রতিশ্রুতির চার লাখ টাকার মধ্যে দুই লাখ টাকাও দিত না। এভাবে শতাধিক কিডনি বেচাকেনা করেছে তারা।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় কিডনি পাচারচক্র সক্রিয় থাকার খবরটি উদ্বেগজনক। পিবিআইয়ের এক তথ্য বলছে, গত কয়েক বছরে গাইবান্ধা, জয়পুরহাট এবং এর আশপাশের এলাকা থেকে অন্তত ৫০ জনকে পাচার করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক কিডনি পাচারকারীচক্রের সদস্যরা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গরিব, অসহায়, অশিক্ষিত লোকদের মোটা অঙ্কের টাকায় কিডনি বিক্রির লোভে ফেলে। বছর কয়েক আগে কিডনি পাচারচক্রের কথা জানাজানির পর কয়েকজন ধরা পড়লেও গডফাদাররা থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে এবং এ সুযোগেই চক্রটি ধীরে ধীরে ভয়ংকর হয়ে ওঠে। এবারও শৈথিল্য দেখানো হলে সমস্যাটি কোন পর্যায়ে যেতে পারে, ভাবলেও গা শিউরে ওঠে।
নতুন চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারের পর র্যাব জানিয়েছে, এই চক্রের মোট সদস্যসংখ্যা ১৫-২০ জন এবং তারা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে অবৈধভাবে কিডনি ক্রয়-বিক্রয়ের সম্পূর্ণ কার্যক্রম সম্পন্ন করে থাকে। এই চক্রের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশে অবস্থানকারী আরেকটি চক্রের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে।
আমরা আশা করব, গোয়েন্দা তৎপরতা আরো বাড়িয়ে এই চক্রের প্রত্যেক সদস্যকে চিহ্নিত করা হবে। সাধারণ মানুষের দারিদ্র্য ও অসচেতনতা, সেই সঙ্গে নজরদারির দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে চক্রটি। তাই এ ধরনের অপরাধের বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা দরকার।