বাংলাদেশে এখনো বেকার তরুণ ও যুবকের সংখ্যা অনেক। আর এই সুযোগটিই কাজে লাগায় দেশি-বিদেশি মানব পাচারকারী চক্র। উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতিবছর শত শত তরুণ-যুবকের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। হাতিয়ে নেয় বিপুল পরিমাণ অর্থ।
অভিবাসীদের অনেকে নিজ ও পরিবারের জায়গাজমি বিক্রি করে বেশি বেতনে চাকরি পাওয়ার আশায় মধ্যপ্রাচ্য ও অন্যান্য দেশে পাড়ি দেন। কিন্তু স্থানীয় দালাল ও রিক্রুট এজেন্সির মাধ্যমে তাঁদের বেশির ভাগই প্রতারিত হয়।অভাব-অনটন বেশি থাকা এবং আয়-উপার্জনের সুযোগ কম থাকায় প্রতিবছর বহু বাংলাদেশি বিদেশে পাড়ি জমান। দীর্ঘকাল ধরেই বিদেশ গমনেচ্ছু সাধারণ মানুষ প্রতারকদের দ্বারা হয়রানির শিকার হচ্ছে।
মিথ্যা আশ্বাস, প্রলোভন, বৈধভাবে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে অবৈধভাবে বিদেশে পাঠানোর ঘটনা ঘটছে। মিথ্যা বিজ্ঞাপন প্রচারের দ্বারা অসংখ্য মানুষ যে শুধু সর্বস্বান্ত হচ্ছে তা-ই নয়, অনেক ক্ষেত্রেই মানুষকে বিপদে পড়তে হচ্ছে।শ্রমিকরা বিদেশে গিয়ে নানা রকমের সমস্যার মধ্যে পড়ছেন। অভিবাসন খাতের বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রামরু সম্প্রতি একটি জরিপের তথ্য প্রকাশ করেছে।
ওই জরিপে দেখা যাচ্ছে, বিদেশে গিয়ে বিমুখ হয়ে ফেরা ৭৪ শতাংশ বাংলাদেশি কর্মী অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ ছাড়া ১৫ শতাংশ মানসিকভাবে, ৯ শতাংশ শারীরিকভাবে এবং ১ শতাংশ সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।বাংলাদেশ থেকে প্রতি মাসে লক্ষাধিক কর্মী বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য যান। তবে কাজ না পেয়ে, আটকে থেকে ও নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়ে বেশির ভাগ কর্মীকে ফিরে আসতে হয়। ২০২০ সালের পর বিদেশফেরত ২১৮ জন কর্মীর ওপর জরিপ চালায় রামরু।
২০২১ সালের অক্টোবর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এক মাস এই জরিপ চালানো হয়। এই ২১৮ জন কর্মীর মধ্যে ৪২ জন নারী।সাম্প্রতিক সময়ে পুরুষদের পাশাপাশি বিদেশগামী নারী কর্মীর সংখ্যাও দ্রুত বাড়ছে। তাঁরা যান মূলত মধ্যপ্রাচ্যে এবং গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে। সেখানে নারী কর্মীরা প্রায়ই নানা সমস্যায় পড়ছেন। শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। ঠিকমতো বেতনও দেওয়া হয় না। অনেককে খালি হাতেই ফিরে আসতে হয়।রামরুর এই জরিপের সত্যতা পাওয়া যায় বছর দুয়েক আগের আরেকটি জরিপে। অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রগ্রাম (ওকাপ) পরিচালিত সেই জরিপে বলা হয়, ৬০ শতাংশ শ্রমিক বিদেশে চাকরির উদ্দেশ্যে গিয়ে সফল হননি।২০১৯ সালে ২৫০ জন দেশে ফেরত আসা শ্রমিকের ওপর একটি জরিপ পরিচালনা করে ওকাপ। সেখানেও একই ধরনের তথ্য পাওয়া যায়।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান প্রক্রিয়ায় লোক পাঠাতে থাকলে ফিরে আসবেই। পুরো প্রক্রিয়ার সংস্কার দরকার। সেই সঙ্গে সচেতনতা বাড়াতে হবে। নিতে হবে আইনগত ব্যবস্থা।