বাংলাদেশের জনশক্তির বড় একটি বাজার মালয়েশিয়া। আবার মালয়েশিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকদেরই সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। প্রায় পাঁচ লাখ শ্রমিক সেখানে কর্মরত থাকলেও তাঁদের মধ্যে খুবই কম আছেন, যাঁরা কোনো না কোনোভাবে হয়রানি কিংবা প্রতারণার শিকার না হয়েছেন। সরকারের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এক শ্রেণির রিক্রুটিং এজেন্সি কিংবা তাদের দালালদের কারণে শ্রমিকদের এই দুর্ভোগে পড়তে হয়।মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক অবৈধভাবে প্রবেশ করেছেন। সম্প্রতি সেখানে অবৈধ শ্রমিকদের ধরপাকড় শুরু হয়েছে। সে দেশের অভিবাসন বিভাগ এখন কঠোর অভিযান চালাচ্ছে। বৈধ কাগজ ছাড়া অভিবাসীদের কেউ বের হলেই তাঁকে আটক করা হচ্ছে।
বৈধ অনুমোদন না থাকায় গত এক মাসে চার হাজারের বেশি অভিবাসীকে আটক করেছে মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগ। এর মধ্যে প্রায় এক হাজার বাংলাদেশি রয়েছেন।আটক কর্মীদের মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যা বাড়ার অন্যতম কারণ পর্যটক হিসেবে গিয়ে ফিরে না আসা। এ ছাড়া যেসব কর্মীর পাসপোর্ট-ভিসা কম্পানির কাছে জব্দ রয়েছে, সেসব কর্মী বের হলে তাঁদের আটক করা হয়।মালয়েশিয়ায় যাঁরা অবৈধভাবে গিয়েছিলেন বা সেখানে যাওয়ার পর যাঁরা অবৈধ হয়েছেন, তাঁরা এখন সমূহ বিপদের মধ্যে আছেন। কোনোভাবে তাঁদের রক্ষা করা যায় কি না, সেটিও ভেবে দেখতে হবে।অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি অনেক দিনের সমস্যা। অবৈধ কর্মীদের বৈধ করা এবং বৈধ কর্মীদের কাগজপত্র তাঁদের কাছে রাখার ব্যাপারে যেসব প্রক্রিয়া রয়েছে, সেগুলো সঠিকভাবে করা হয় না। এখানে মালয়েশিয়া সরকারের তেমন দায়দায়িত্ব থাকে না।এ ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়েরও আশাব্যঞ্জক ভূমিকা দেখা যায় না। অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকারের উচিত আমাদের শ্রম উইংকে ব্যবহার করে কর্মীদের বৈধতা দেওয়া এবং বৈধ কাগজপত্র তাঁদের কাছে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করা।এটি নিশ্চিত না হওয়ার কারণে ঘুরেফিরে একই জিনিস বারবার ঘটছে। প্রতিবারই তাত্ক্ষণিক কিছু সামাধান করা হয়, কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী কোনো সমাধান নেই। অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটির সমাধান কঠিন কাজ নয়। সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরব, ওমান ও কাতার। জনশক্তি রপ্তানিতে এই তিন দেশের পরই মালয়েশিয়ার অবস্থান। একসময় দেশটি বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির বড় বাজার হিসেবে গড়ে ওঠে।কিন্তু নানা জটিলতা ও এক শ্রেণির এজেন্সির প্রতারণার কারণে এই বাজারের সুফল মেলেনি। আমরা আশা করব, আমাদের মিশন ও সংশ্লিষ্ট সবার সহেযোগিতায় মালয়েশিয়ায় সৃষ্ট সংকট কেটে যাবে।