কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসে প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে সাত কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। রেমিট্যান্স আসার এই গতি মাসের বাকি দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকলে চলতি মাসে প্রবাস আয়ের পরিমাণ আড়াই বিলিয়ন ডলার হতে পারে। গত মাসেও একইভাবে প্রবাস আয়ের গতি ঊর্ধ্বমুখী ছিল।
ছাত্র-জনতার ব্যাপক আন্দোলনের সময় বাংলাদেশের প্রবাসী কর্মীদের একটি বড় অংশ রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ করেছিল।
ধরে নেওয়া যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ায় তারা পুনরায় নতুন উদ্যমে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে শুরু করেছে। হয়তো তারও প্রভাব রয়েছে ক্রমবর্ধমান রেমিট্যান্সপ্রবাহে। তার পরও রেমিট্যান্সপ্রবাহ আরো বাড়াতে সরকারকে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা।
সম্প্রতি প্রকাশিত আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়লেও প্রবাস আয়ের একটি বড় অংশ এখনো ব্যাংকের মাধ্যমে না এসে হুন্ডি বা অন্যান্য মাধ্যমে আসছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, হুন্ডি বন্ধ করা গেলে বর্তমানে বছরে আসা ২৫ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স দ্বিগুণ অর্থাৎ ৫০ বিলিয়ন করা সম্ভব।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, ব্যাংক ও খোলাবাজারে ডলারের দামের পার্থক্য বেশি থাকলে বিদেশ থেকে অর্থ প্রেরণকারীদের এখন হুন্ডিতে টাকা পাঠানো অনেক বেশি লাভজনক হতে পারে। তাই এই পার্থক্য কমাতে হবে। ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ প্রেরণ আরো সহজ, দ্রুত ও আকর্ষণীয় করতে হবে। তদুপরি আমাদের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্স প্রেরকদের অবদান বিবেচনায় নিয়ে তাঁদের নানাভাবে সম্মানিত করা যায়।
নানা রকম রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা দেওয়া যায়। এ রকম আরো কিছু পদক্ষেপ নিলে প্রবাসী কর্মীরা হুন্ডির বদলে ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠাতে আরো বেশি করে উৎসাহিত হবেন। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখার ক্ষেত্রে এখনো রপ্তানি আয়ের ভূমিকাই প্রধান। আর সে ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে তৈরি পোশাক শিল্প। কিন্তু কিছুদিন ধরে এই খাতে যে অস্থিরতা বিরাজ করছে, তা যেন রপ্তানি আয়কে ক্ষতিগ্রস্ত না করে সেদিকেও আমাদের অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে।
প্রবাস আয় বৃদ্ধির জন্য বৈদেশিক কর্মসংস্থানে আমাদের আরো বেশি মনোযোগ দিতে হবে। আমাদের দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে এবং পুরনো শ্রমবাজারের পাশাপাশি নতুন নতুন শ্রমবাজার খুঁজতে হবে।