সারা দেশেই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হচ্ছে। অপরাধ বাড়ছে খোদ রাজধানীতেও। কথায় কথায় খুনাখুনি হচ্ছে। পাড়া-মহল্লায় সন্ত্রাসীদের উৎপাতে মানুষ তটস্থ থাকছে।
সেই সঙ্গে বাড়ছে চুরি-ছিনতাই-ডাকাতির ঘটনা। এই অবস্থায় নাগরিকদের উদ্বেগের পারদ শুধুই ওপরে উঠছে। বেশির ভাগ মানুষ এ জন্য পুলিশের নিষ্ক্রিয়তাকেই বেশি দায়ী করছেন।
প্রতিদিনের মতো গতকালও এমন একাধিক খবর প্রকাশিত হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ বা ডিএমপির অধীন ৫০টি থানায় চলতি বছরের প্রথম চার মাসে শুধু চুরি ও ছিনতাইয়ের অপরাধে ৫৮৩টি মামলা করা হয়। এসব ঘটনায় ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন পাঁচজন এবং আহত হয়েছেন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১৫ জন। এর মধ্যে গত জানুয়ারি মাসে মামলা করা হয় ডিএমপির থানাগুলোতে ১২২টি, ফেব্রুয়ারিতে ১৫১টি, মার্চে ১৫১টি এবং এপ্রিলে ১৫৯টি।
গড়ে প্রতি মাসে মামলা করা হয়েছে ১৪৬টি। ২০২১ সালের একই সময়ে গড়ে প্রতি মাসে মামলা হয়েছিল ১২৪টি এবং ২০২০ সালে মামলা হয়েছিল ১১৬টি। কিন্তু এটি অপরাধের প্রকৃত চিত্র প্রকাশ করে না। কারণ ভুক্তভোগী অনেকেই আরো বিড়ম্বনার ভয়ে থানায় মামলা করতে যান না।
থানাও অনেক সময় এসব ঘটনায় অন্যভাবে মামলা নেয় কিংবা মামলা না নিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। ফলে থানার তথ্যে চুরি-ছিনতাইয়ের প্রকৃত চিত্র পাওয়া যায় না। রাজধানীতে চুরি-ছিনতাই বৃদ্ধির এই প্রবণতায় লাগাম টানতে গত মাসে ডিএমপি থেকে পুলিশের সব বিভাগকে ১৯টি লিখিত নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এতে পেশাদার ছিনতাইকারীদের পাশাপাশি নতুন করে কারা অপরাধে জড়াচ্ছে তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে বলা হয়েছে। চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যদের ওপর নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে।
অপরাধ পরস্পর সম্পর্কিত। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, উঠতি বয়সীদের চুরি-ছিনতাইয়ে যুক্ত হওয়ার একটা প্রধান কারণ মাদকাসক্তি। মাদকের টাকা জোগাড় করতেই ছিন্নমূল কিশোর-তরুণরা ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ছে। ক্রমে ক্রমে এরা বিভিন্ন গ্যাং বা দলের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে।
ঢাকায় এমন অনেক দলই সক্রিয়। এদের নেতৃত্বে থাকা অনেক শীর্ষস্থানীয় সন্ত্রাসী দেশের বাইরে থেকে দল পরিচালনা করে। এসব দল মাদকসহ বিভিন্ন চোরাচালান, মাদকের কারবার পরিচালনা, চাঁদাবাজি, ডাকাতি-ছিনতাইসহ অনেক অপকর্মে যুক্ত। এদের কাছে স্বয়ংক্রিয় অত্যাধুনিক অস্ত্র রয়েছে বলে প্রকাশিত খবরাখবর থেকে জানা যায়।
মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর অন্যতম হচ্ছে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও মানসম্মান নিয়ে বসবাস করা। আর রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে নাগরিকদের সেই নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা। কিন্তু বাস্তবে আমরা কী দেখছি? পরিস্থিতি ক্রমে বিপরীত দিকে যাচ্ছে। আইন ও অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, দুর্বল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাই দেশে অপরাধ বৃদ্ধির মূল কারণ।
সেই সঙ্গে রয়েছে আইনি প্রক্রিয়ার দুর্বলতা এবং বিচারে দীর্ঘসূত্রতা। এসব কারণে অপরাধীরাও ক্রমে বেপরোয়া হয়ে উঠছে। আর সমাজ ক্রমেই বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। আমরা চাই, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলো অপরাধ দমনে আরো শক্ত অবস্থান নিক। তদন্ত প্রক্রিয়া দ্রুততর ও স্বচ্ছ করা হোক এবং অপরাধীরা দ্রুততম সময়ে শাস্তি পাক।