English

27 C
Dhaka
সোমবার, নভেম্বর ১৮, ২০২৪
- Advertisement -

অপব্যবহার বন্ধ করুন: অকার্যকর হয়ে যাচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক

- Advertisements -

একটা সময় ছিল যখন অ্যান্টিবায়োটিক ছিল না। এখন যেগুলোকে সাধারণ অসুখ মনে করা হয়, সেসব অসুখে তখন শত শত মানুষের মৃত্যু হতো। ডায়রিয়া-কলেরায় গ্রামের পর গ্রাম সাফ হয়ে যেত। অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের পর সেসব অসুখে সময়মতো চিকিৎসা নিলে মৃত্যু হয় না বললেই চলে।

কিন্তু সেই জীবনদায়ী অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার আমাদের আবার সেই অ্যান্টিবায়োটিক-পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা।
অ্যান্টিবায়োটিকের অব্যবহার জীবাণুর মধ্যে প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি করছে। প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি হলে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ প্রয়োগ করেও সেই জীবাণু ধ্বংস করা যাবে না। সে ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক থাকা এবং না থাকার মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকবে না। পৃথিবীব্যাপী তেমনই একটি অবস্থা তৈরি হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, শুধু ২০১৯ সালে ১২ লাখ ৭০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে জীবাণুর অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধক্ষমতার কারণে। বাংলাদেশে এ কারণে মৃত্যুর সঠিক পরিসংখ্যান আমাদের জানা নেই। তবে এখানে পরিস্থিতি যে আরো খারাপ তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। কারণ উন্নত দেশে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কেউ কোনো ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ কিনতে পারে না। বাংলাদেশে ওষুধের দোকানে মুড়িমুড়কির মতোই অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি হয়, চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রের প্রয়োজন হয় না। পুরো কোর্স ওষুধ খাওয়া হয় না। ফলে জীবাণু সহজেই অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে ওঠে।
মানবজাতিকে সম্ভাব্য বিপর্যয় থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৫ সাল থেকে প্রতিবছর ১৮ থেকে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত বিশ্ব অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সচেতনতা সপ্তাহ পালন করে আসছে। এ বছর এই সপ্তাহের প্রতিপাদ্য হলো, ‘অ্যান্টিমাইক্রোবিয়ালস : সতর্কতার সঙ্গে পরিচালনা করুন। ’ কিন্তু গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরাখবর দেখে মনে হয় না যে দেশে আদৌ সচেতনতা বাড়ছে। বরং পরিস্থিতি ক্রমে খারাপের দিকেই যাচ্ছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) গবেষণায় উঠে এসেছে, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ বেশ কিছু রোগের জীবাণুর ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ এখন ঠিকমতো কাজ করছে না। ছয় হাজার ৮৬৮ জন রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৮ শতাংশ ক্ষেত্রে প্রায় কোনো অ্যান্টিবায়োটিকই কাজ না করার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে। এর আগেও বিভিন্ন গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। এমনই এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৫৬ শতাংশ রোগীর শরীরে বেশ কিছু অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করছে না। অ্যান্টিবায়োটিক কাজ না করার অর্থ হলো জীবাণু ধ্বংস হবে না। অ্যান্টিবায়োটিক-পূর্ববর্তী সময়ের মতো রোগী অসহায়ভাবে মারা যাবে।

দরিদ্র মানুষ সাধারণত চিকিৎসকের কাছে যেতে চায় না চিকিৎসকের অতিরিক্ত ফি, বহু ধরনের অপ্রয়োজনীয় টেস্ট করাতে অনেক অর্থ চলে যাবে এই ভয়ে। তারা তখন ওষুধের দোকানের বিক্রেতার কাছে যায় এবং বিক্রেতা একটি অ্যান্টিবায়োটিক ধরিয়ে দেন। আবার অনেক চিকিৎসকও অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার করেন বলে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় না করেই তাঁরা অনুমানের ওপর এক বা একাধিক অ্যান্টিবায়োটিক ধরিয়ে দেন। মানবজাতির অস্তিত্বের স্বার্থে আমাদের অ্যান্টিবায়োটিকের এমন অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে। ব্যবস্থাপত্র বা প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন