যেসব খাতে রাষ্ট্রের সেবা কার্যক্রম মাঝেমধ্যেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়, পাসপোর্ট অফিস এমনই একটি সেবা খাত। অনেক চেষ্টার পরও পাসপোর্ট অফিস থেকে দুর্নীতি সর্বাংশে দূর করা সম্ভব হয়নি। প্রক্রিয়া এখন অনেক সহজ হলেও পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার ক্ষেত্রে এখনো অনেক জটিলতা রয়ে গেছে। আর এই সুযোগটিই নেয় একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী।
ফলে আবেদনপ্রক্রিয়ার অনেক ধাপে গ্রাহককে অনিয়ম, দুর্নীতি ও হয়রানির শিকার হতে হয়। তারই একটি উদাহরণ মেহেরপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস।
প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, সেখানে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করেন একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী গত বুধবার সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকের দুই ঘণ্টার সরেজমিনে গিয়ে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে লাগামহীন ঘুষ লেনদেনের খবর। জানা গেছে, ওই পরিচ্ছন্নতাকর্মীর ইশারা ছাড়া নড়ে না আবেদনপত্রের ফাইল। তাঁর ইশারা থাকলে উপসহকারী পরিচালক দ্রুত স্বাক্ষর করেন। পাসপোর্টপ্রত্যাশীরা জানিয়েছে, নতুন আবেদনকারীর কাছ থেকে দেড় হাজার থেকে শুরু করে চার-পাঁচ হাজার টাকা নেওয়া হয়।
পুরনো পাসপোর্ট নবায়ন করতে এলে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা ও নাম-বয়স সংশোধন করতে এলে তাঁদের কাছ থেকে ৪০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত নেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। অভিযুক্ত পরিচ্ছন্নতাকর্মী বলেছেন, এই টাকার ভাগ তাঁর একার নয়। ঢাকা অফিস পর্যন্ত দিতে হয়। মেহেরপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপসহকারী পরিচালকও প্রকারান্তরে অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছেন।
অন্য সব সরকারি অফিসের মতো পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাষ্ট্রের বেতনভুক। জনগণই তাঁদের বেতনের অর্থ জোগাচ্ছে। রাষ্ট্রের পক্ষে সেই জনগণকে নির্দিষ্ট সেবা প্রদানের জন্য তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মেহেরপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস নিয়ে প্রকাশিত খবরটি পাঠ করার পর প্রশ্ন করতে হয়—এটাই কি সেই সেবা প্রদানের নমুনা?
মেহেরপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এটাই কি সারা বাংলাদেশের চিত্র? পাসপোর্ট ইস্যু, পুলিশ ভেরিফিকেশন, পাসপোর্ট সংশোধন, নবায়ন ও ডেলিভারি, বিদেশি নাগরিকের ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি, শরণার্থীদের আইডি কার্ড ইস্যু, অ্যারাইভাল ভিসা প্রদানসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই কি দেশজুড়ে এমন হয়রানির শিকার হতে হয় সাধারণ মানুষকে? একসময় পাসপোর্ট অফিসে দালালদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পাসপোর্ট অফিস যে দালালমুক্ত করা যায়নি, মেহেরপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস তার প্রমাণ।
রাষ্ট্রের সেবাগুলো ঠিকমতো জনগণের কাছে পৌঁছাচ্ছে কি না তা দেখার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। আশা করি মেহেরপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের অনিয়ম-দুর্নীতি দূর করতে অতিদ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।